চিকিৎসা কেন্দ্রে বাগবিতণ্ডা এবং চিকিৎসকদের কর্মবিরতি

 

সম্প্রতিদেশের বেশ কয়েকটি মেডিকেল কলেজ-হাসপাতালে ডাক্তারের সাথে সাধারণরোগী বা তার পরিজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা,হাতাহাতি এমনকি মারামারির খবরওসংবাদের শিরোনাম হচ্ছে। জেলার সদর হাসপাতালগুলোতেও বিচ্ছিন্নভাবে অভিন্ন ঘটনা ঘটছে। এর মাঝে হয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ ঢাকা মেডিকেলকলেজের নাম। এসব ঘটনায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। এতে চিকিৎসা প্রার্থীরভোগান্তি চরমে উঠছে,যা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। অথচ প্রতিটি ঘটনার উৎসমূলঅতি সাধারণ,যা সহজে এড়ানো সম্ভব।

ঢাকা মেডিকেলে বয়োবৃদ্ধ মাকে দেখতে এসেবিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র ইন্টার্নি চিকিৎসকের হাতে লাঞ্ছিত হন। গত মঙ্গলবারদুপুরে হাসপাতালে মাকে দেখতে যান ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্র। এসময় ওই ভবনের লিফট দিয়ে নিচে নামতে চাইলে হাসপাতালের ইন্টার্নি চিকিৎসকরাতাকে বাধা দেয়। নামতে অস্বীকৃতি জানালে দু পক্ষের মধ্যে বচসা হয়। একপর্যায়ে ইন্টার্নি চিকিৎসকরাতাকে ও তার এক বন্ধুকে মারধর করে। এরই জেরধরে ঢাবির ছাত্ররা হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ভাঙচুর চালায়।

উল্লেখ্য,সম্প্রতি রাজশাহী,ঢাকার বারডেম ও মিটফোর্ডের পর ঢাকা মেডিকেলে এ ধরনেরঘটনা ঘটলো। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে,একজন ডাক্তারের কিংবা রোগীর স্বজনদেরঔদ্ধত্যমূলক আচরণে কেন রোগীর জীবন বিপন্ন করে তোলা হবে?আপনজন যখন কোনো রোগেভোগেন তখন স্বাভাবিকভাবেই সেই রোগীর পরিবার বিপর্যস্ত থাকে। আপনজনকে সুস্থকরার লক্ষ্যে চিকিৎসার আশায় তারা ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। এমনিতেই সরকারিকোনো কোনো হাসপাতালে রোগীর সাথে কোনো কোনো নার্স,আয়া থেকে শুরু করে ডাক্তারেরদায়িত্বে অবহেলার অভিযোগের কথা শোনা যায়। রয়েছে হাসপাতালগুলোরঅব্যবস্থাপনা,হয়রানির পুরোনো অভিযোগও। এমতাবস্থায় চিকিৎসাসেবা বন্ধ রেখেএভাবে সংষর্ষে জড়ানো সত্যিই দুঃখজনক।

সকল ভুক্তভোগীই যে বাগবিতণ্ডায় লিপ্ত হচ্ছেন,তা কিন্তু নয়। যেমনটি সকল সিভিল সার্জনই ওষুধ চুরির অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামিও নন, নারীবাজির অভিযোগেও অভিযুক্ত নন। হাতেগোনা কয়েকজনঅনিয়ম করেন। দায়িত্বে অবহেলা করেন। অধিকাংশ রোগীর লোকজনই অনিয়ম মেনে নেন, হাতে গোনা কিছু মানুষভুল চিকিৎসার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। কিন্তু দু-একজন রোগীর বা তারপরিজনের সাথে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারদের অপ্রীতিকর ঘটনার জের ধরে রোগীর চিকিৎসানা করে প্রতিবাদ মুখর হয়ে সংঘর্ষে নেমে আসা কতোখানি যুক্তিসঙ্গত?সংশ্লিষ্টডাক্তারদের এমন আচরণ যেমন প্রত্যাশিত নয়, তেমনি রোগীর স্বজনের অশোভন আচরণওসমর্থন যোগ্য নয়।সেবার ব্রত নিয়েই চিকিৎসকরা তাদের পেশা জীবন শুরু করেন।

রোগীকে সুস্থ করেতোলার মাধ্যমেই একজন চিকিৎসকের পেশা জীবনের সার্থকতা। কিন্তু একজন রোগীরপরিজনের কর্মকাণ্ডেের জন্য ঢালাওভাবে অন্য রোগীদের চিকিৎসায় ব্যাঘাত সৃষ্টিওসমর্থন যোগ্য নয়। এ সংস্কৃতি অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত।চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রএ খাতে প্রতিবছর বিশাল অঙ্কের ভর্তুকি দেয়। এমনিতেই সেবাটি অনেক ক্ষেত্রেবাণিজ্যিকীকরণের কারণে আজ মানবিক দিকটি নানাভাবে উপেক্ষিত। তাই সাধারণমানুষ সুচিকিৎসা বঞ্চিত। এ অবস্থার অবসান জরুরি। যেকোনো মূল্যে মানুষের এমৌলিক অধিকার নিশ্চিত থাকা দরকার।