চিকিৎসায় নবদিগন্তের সূচনা হোক

 

১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশে মেডিকেল কলেজের সংখ্যা সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে একশ’ও ছাড়ায়নি এবং সনদধারী চিকিৎসক প্রায় ৫৬ হাজার। অর্থাৎ প্রতি দু হাজার ৮০০ মানুষের জন্য চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র একজন। এই চিকিৎসকদের মাত্র ৪০ শতাংশ সরকারি হাসপাতালগুলোতে কর্মরত, এটিও মূলত রাজধানী কিংবা শহরকেন্দ্রিক। গ্রামীণ জনজীবনে চিকিৎসাসেবা আজও সেভাবে পৌঁছেনি। তবে স্বাস্থ্যখাতের জন্য আপাতত সুসংবাদ হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার নতুন ১১টি মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন, যার মধ্যে ছয়টি আর্মি মেডিকেল। প্রধানমন্ত্রী প্রতি বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠারও ঘোষণা দিয়েছেন। স্বাস্থ্যসেবা এমন এক খাত, যার অনুপস্থিতি মানুষের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করে, জাতীয় সম্ভাবনাগুলোকে করে তোলে অনিশ্চিত। পর্যাপ্তসংখ্যক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী থাকলে জাতীয় অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রার জোগানও যে বাড়ে তার উদাহরণ বর্তমান কিউবা। দেশটির অসংখ্য চিকিৎসক দুনিয়াব্যাপি চিকিৎসাসেবা দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখছেন। বাংলাদেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী চিকিৎসাবিদ্যায় আগ্রহী। তাদের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিশ্চিত করা গেলে স্বাস্থ্য খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে, বিশ্ব স্বাস্থ্যসেবায়ও আমরা ভূমিকা রাখতে পারবো ব্যাপকভাবে। বৈদেশিক আয় তো বাড়বেই। তবে এ লক্ষ্যে পৌঁছুতে হলে সবার আগে দরকার নীতিনির্ধারক মহলের সদিচ্ছা। অবকাঠামো প্রস্তুতির ঘাটতির মধ্যেই গতকাল প্রতিষ্ঠানগুলো যাত্রা শুরু করেছে। তা সত্ত্বেও উদ্যোগটি অবশ্যই সময়োপযোগী ও সুদূরপ্রসারী। বরং অনেক সময় প্রস্তুতি নিতে গিয়ে এতো বেশি কালক্ষেপণ হয়, যা কাম্য নয়। তবে আমরা আশা করবো, অবকাঠামোগত যেসব দুর্বলতা এখনো রয়ে গেছে, তা অতি জরুরি ভিত্তিতে সরকার কাটিয়ে উঠবে- এমনটাই প্রত্যাশিত। বিদ্যমান চিকিৎসা শিক্ষাব্যবস্থা এমনিতেই সংকটে রয়েছে। এর আগে পাঁচ বছরে ১১টি নতুন সরকারি মেডিকেল কলেজ চালুর ফলে শিক্ষার্থীর আসন বাড়ে এক হাজার ১০০টি। কিন্তু সৃষ্টি হয়নি সেই অনুযায়ী শিক্ষকের নতুন পদ। ছাত্র অনুপাতে শিক্ষক নিয়োগের শর্ত বিএমডিসি বেধে দিলেও পুরনো কয়েকটি মেডিকেল কলেজ বাদে অন্যরা তা লঙ্ঘন করছে।

নীতিমালায় আছে, ৫০ জন শিক্ষার্থীর একটি মেডিকেল কলেজ করলে ২৫০ শয্যার হাসপাতালও থাকতে হবে। বেশির ভাগ বেসরকারি মেডিকেল কলেজই তা মানছে না। তাই র কলেজের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি সেগুলোর মান রক্ষার দিকটিও বিবেচনায় নিতে হবে।