চাষ আবাদে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত মানে দেশের ক্ষতি

 

সার, বীজ ও কীটনাশক। এ তিনটি ভেজালমুক্ত করতে না পারলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়। হচ্ছেও। কৃষি প্রধান দেশে চাষ-আবাদ ঝুঁকিমুক্ত করতে না পারলে স্বনির্ভরতা অর্জন অসম্ভব। বীজ ও কীটনাশক ভেজালমুক্ত করা খুবই জরুরি। দেশের কৃষি বিভাগকেই এ বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কিছু ব্যক্তি নিযুক্ত থাকলেও দায়িত্ব পালনে যে শতভাগ স্বচ্ছ্বতার অভাব তা নিয়ে সন্দেহ নেই। আড়ালে দুর্নীতি নয়কি? বিভাগীয় কর্তাদের কুম্ভঘুমের বদলে কড়া নজরদারির বিকল্প নেই।

 

কীটনাশক এমন এক পদার্থ তা পরীক্ষা করে কেনার উপায় নেই। ফসলে প্রয়োগের পর প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ না হলে কৃষকদের অধিকাংশই তা প্রয়োগের মাত্রা বাড়িয়ে দেন। এতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগের ক্ষতিকর মানসিকতা গড়ে ওঠে। ইট-বালি সুরকিতে রঙ লাগিয়ে কীটনাশক জাতীয় গন্ধযুক্ত করে ভালো কীটনাশক বলে বাজারে বিক্রিরও উদাহরণ আছে। বীজ? চকচকে মোড়কে ভরে ভালো বীজ বলে প্রচার করে অনেকেই কৃষক ঠকাচ্ছে। যেসব কোম্পানি ভালো বীজ বাজারজাত করে সুনাম অর্জন করেছে, তাদের মোড়ক নকল করে ভেজাল বীজ ভরে দেদারছে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকেও মাঝে মাঝে নিম্নমানের বীজ পাচার করে এনে একশ্রেণির পাচারকারী তা বাজারে বিক্রি করে থাকে। মনে রাখা দরকার, বীজ যদি ভেজাল হয় তাহলে কৃষক যখন বুঝতে পারেন, তখন মরসুমটাই হাত ছাড়া হয়ে যায়। এতে কৃষকই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, ক্ষতির বোঝাটা দেশের ওপরই পড়ে। সিল সাপ্পড়ে কিছু রঙের ব্যবহারে বীজের গুণগত মান বোঝানোর মধ্যে কর্মকাণ্ড সীমাবাদ্ধ রাখলে যে প্রতিকার মিলবে না তা অবস্থাদৃষ্টে দায়িত্বশীলরা নিশ্চয় অস্বীকার করবেন না। সারের ক্ষেত্রেও অনেকাংশে তাই। তবে সরকারি ভর্তুকি মূল্যে ডিলারদের মাধ্যমে বিক্রয়কৃত সারে এখন পর্যন্ত ভেজালের তেমন নজির না মিললেও দামে হেরফেরের অভিযোগ মাঝে মাঝেই পাওয়া যায়। কিছু এলাকায় জৈব সার উৎপাদনের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের যে যথেষ্ট অভাব তা পদে পদে পরিলক্ষিত হয়।

 

কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত মানে দেশের ক্ষতি। কৃষি উৎপাদনের মধ্যদিয়েই তো স্বনির্ভরতার স্বপ্ন দেখে দেশ। সার বীজ ও কীটনাশক ভেজাল হলে সেই স্বপ্ন মাঠে মারা যেতে বাধ্য। হচ্ছেও তাই। ভেজালকারী ও ভেজালদ্রব্য বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান দেশে রয়েছে। বিধান থাকলেই তো আর সব কিছু ভেজালমুক্ত হয় না। তার যথাযথ প্রয়োগ থাকতে হয়। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ প্রয়োজন। কর্তারা কি তা করবেন?