চালের দাম চড়ছে বলেই দানা বাধছে কিছু প্রশ্ন

 

সারা দেশেই চালের মূল্য ঊর্ধ্বমুখি। অথচ দেশে এখন চালের সঙ্কট নেই বলে দাবি খাদ্যমন্ত্রীর। তাহলে কি বাজার নিয়ন্ত্রণে তদরারকির অভাবে মূল্যবৃদ্ধি? নাকি সঙ্কট সৃষ্ট করে বাড়তি দাম? অভিযোগ রয়েছে যারা মূল্যবৃদ্ধির কলকাঠি নাড়ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এসব কারণেই প্রশ্ন উঠেছে চালের উৎপাদন চাহিদার তুলনায় বেশি হওয়ার পরও কেন আমদানি করা হচ্ছে? তবে কী পরিমাণ আমদানি হচ্ছে খাদ্য বিভাগ যেমন তার হিসাব রাখে না, তেমনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও। যদিও এই আমদানিতে পঁচিশ শতাংশ শুল্কারোপ করা হয়েছে।

চালের দাম বাড়ায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষ। দিন আনে দিন খায় এমন মানুষজন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। বর্তমানে সরকারি গুদামে প্রায় সাড়ে সাত লাখ টন চাল মজুদ রয়েছে। পাইপলাইনে রয়েছে দেড় লাখ টন। এবার সরকার সাত লাখ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। মিল মালিকদের ছয় লাখ বিশ হাজার মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করার চুক্তি রয়েছে। কিন্তু তারা সরবরাহ করেছে চার লাখ আশি হাজার টন। তাদের কাছে পাওনা রয়েছে এক লাখ চল্লিশ হাজার টন। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বরং আরও সময় বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন কর্মসূচিতে সরকারের মাসে দুই লাখ টন চাল প্রয়োজন হয়। এবার পঁচিশ লাখ টন অতিরিক্ত ধান উৎপাদন হয়েছে। গুদামে যে মজুদ রয়েছে তা দিয়ে আগামী আমন মরসুম পর্যন্ত চলার পরও প্রায় ছয় লাখ টন চাল মজুদ থাকবে। সুতরাং দেশে কোনো ধরনের চাল সঙ্কটের সামান্য সম্ভাবনাও নেই। খাদ্য বিভাগের ধারণা, কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করা হচ্ছে বাজারে, যাতে চালের আমদানি শুল্ক বাতিল করা হয়। আবার সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সরকার এবার ধান কেনায় মিল মালিকরা ক্ষুব্ধ। দীর্ঘদিন ধরে তারা নিজেরাই এই কাজটি করে আসছিলেন। এবার তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, এমন অবস্থান থেকে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে। আবার দেখা গেছে, আমদানি করা চাল অত্যন্ত নিম্নমানের, খাবার উপযোগী নয়। অতএব, আমদানির ক্ষতিপূরণে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে।

সৃষ্ট কৃত্রিম সঙ্কট মোকাবেলায় খুব শিগগিরই ঢাকা চট্টগ্রাম ও খুলনায় খোলা বাজারে কম মূল্যে চাল বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু করছে খাদ্য বিভাগ। পরে পর্যায়ক্রমে প্রয়োজন অনুযায়ী সারাদেশে চালু করা হতে পারে। এই ক্ষেত্রেও অনিয়ম, দুর্নীতির কথা বলা হচ্ছে। কারণ অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, বারবারই এসব ক্ষেত্রে অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে। সম্প্রতি হতদরিদ্রের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি দশ টাকা কেজি চাল বিক্রিতে নানা অনিয়মের কথা উঠে আসছে যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। অভিযোগগুলো অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে অনিয়ম যে হ্রাস পাবে তা বলাই বাহুল্য।