গড়তে হবে ঝুঁকিমুক্ত বসবাসের মতো শক্ত ভবন

 

পৃথিবী ধ্বংস হবে। তাই বলে কি বসে থাকলে চলে? প্রবাহমান সময়ের স্রোতে তাল মেলাতে না পারলে পিছিয়ে পড়তে হবে। ফলে বসে থাকার সুযোগ নেই। সে প্রলয়ঙ্করি ঝড়ই হোক আর ভয়াবহ ভূমিকম্পই পূর্বাভাস হোক, আতঙ্ক রক্ত সঞ্চালন বন্ধ করলে চলে না, দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি নিতে হয়। সেটাই সময়ের সাথে তাল মেলানো বা সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এতে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ বহুলাংশে কমানো যায়। রক্ষা পায় বহু প্রাণ। বাংলাদেশের রাজধানীতে সামান্য অগ্নিকাণ্ড ঘটলেই যে অসহায়ত্ব ফুটে ওঠে, আর বিজ্ঞানীদের পূর্বাভাস মতো ভূমিকম্প হলে অবস্থা কেমন হবে তা অনুমান করাও কঠিন।

গবেষকদের মতে, বাংলাদেশসহ ভারত ও মিয়ানমারের কিছু অংশজুড়ে একটি সুবিশাল চ্যুতির (ফল্ট) অবস্থানের কারণে এই এলাকায় রিখটার স্কেলে ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। এ রকম দুর্যোগে ঢাকাসহ বাংলাদেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও বিপুল প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। বিজ্ঞানীরা অনেকটা নিশ্চিত হয়েই ভয়াবহ ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিয়েছেন। অবশ্য পূর্বাভাসে বলা হয়নি, কবে কখন কতো মাত্রার ভূমিকম্প হবে। বিজ্ঞানীদের দেয়া তথ্য মতে ওই চ্যুতির ফলে ভূমিকম্পের উত্তপত্তি স্থলের ১শ কিলোমিটারের মধ্যে ভয়াবহ ক্ষতি হতে পারে। প্রাণহানির আশঙ্কা অনুমানেরও অনেক বেশি হওয়ার শঙ্কা বিদ্যমান। কেননা, ওই ১শ কিলোমিটারের মধ্যে ঘনবসতি ও অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা রাজধানী শহর ঢাকা রয়েছে। যেখানে যেনতেনভাবে বহু মানুষের অবস্থান, সেখানে ভূমিকম্প একটু বেশি মাত্রার হলে প্রাণহানি যে অনুমানেরও বেশি সংখ্যক হওয়ার আশঙ্কা অমূলক নয় তা বলাই বাহুল্য।

কোন শহরই একদিন ঘিঞ্জি হয় না। যেমন চুয়াডাঙ্গা। জেলা শহর চুয়াডাঙ্গার বেশ কিছু মহল্লা রয়েছে যেমন ঘনবসতি, তেমনই অপরিকল্পিত ও যেনতেনভাবে নির্মাণ করা অট্টালিকা। এসব মহল্লায় ভয়ানক মাত্রার ভূমিকম্প দূরের কথা, সামান্য অগ্নিকাণ্ডও সর্বগ্রাসী হতে পারে। কেননা, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রবহন করা গড়ি চলাচলের ন্যূনতম রাস্তাটুকুও রাখা হয়নি। আর রাস্তার পাশে প্রয়োজনে পানি আহরণের ব্যবস্থা? কখনো পানি ওরকম বিপদ আসতে পারে তেমনটি চুয়াডাঙ্গার কোনো পৌরকর্তা ভেবেছেন? এভাবেই কালক্রমে দায়িত্বশীলদের উদাসীনতার কারণে শহর হয়েছে ঘিঞ্জি। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বসবাসকারীদের জীবন। সে কারণেই যথাসময়ে সঠিক কাজটিই করতে হয়। সঠিক কাজের নির্দেশনা ও পরিকল্পিত নগরায়নের জন্য মূলত পূর্বের খেসরাতে শুধরানো জন্যই মূলত নগর উন্নয়নে শহর কমিটি গঠন করা হয়। যার কালক্রমে নাম পৌরসভা বা সিটি করপোরেশন করা হয়েছে।

নগরবাসী পরিকল্পিত নগরের আশায় ভোট দেয়, জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে, বছর বছর করও দেয়। অথচ নাগরিক সুবিধার বদলে মহল্লাগুলোর ঘিঞ্জি দশা বাড়তেই থাকে। রাস্তা? সেটাও বিধি মোতাবেক হুকুম-দখল করে চলাচলের উপযোগী করতে পদে পদে গড়িমসি পরিলক্ষিত হয়। কেন? ভোটের লোভ। এ কারণেই বিধি প্রয়োগে দায়িত্বশীলদের নমনীয়তায় যাচ্ছে তাই অবস্থা। এ অবস্থা থেকে বের হতে হবে। ভূমিকম্পসহ যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবে। যেহেতু বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ, সেহেতু কালবিলম্ব না করে দ্রুত দুর্বল ঘরবাড়ি অপসারণ করতে হবে। গড়তে হবে ঝুঁকিমুক্ত বসবাসের মতো শক্ত ভবন।