গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা জরুরি

 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ সরকারি হাসপাতালগুলোর অবস্থা এখন অত্যন্ত শোচনীয়। ভবন আছে, বরাদ্দ আছে, কিছু চিকিৎসা সরঞ্জামও আছে- কিন্তু চিকিৎসা নেই। কারণ গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র রোগীদের যারা চিকিৎসা দেবেন খাতায়-কলমে নাম পাওয়া গেলেও বাস্তবে তাদের দেখা মেলে না। গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র বিপুল অর্থব্যয়ে স্বাস্থ্যসেবার যে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে, কার্যকর মনিটরিং বা পর্যবেক্ষণের অভাবে তা এক অর্থহীন উদ্যোগে পরিণত হতে চলেছে।

চিকিৎসকদের একটি সাধারণ প্রবণতা হচ্ছে গ্রামাঞ্চলে যেতে না চাওয়া। প্রধানমন্ত্রী নিজেও এ নিয়ে বহুবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী চমক লাগানোর মতো কয়েকটি সফরের সময় অনুপস্থিত কয়েকজন চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্তের আদেশও দিয়েছেন। কিন্তু তাতে বাস্তবতার তেমন কোনো হেরফের হয়নি। এজন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কার্যকর মনিটরিঙের জন্য যে ধরনের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন ছিলো, তার অভাবই আমাদের চোখে পড়ে। শুধু তা-ই নয়, কার্যকর মনিটরিঙের অভাবে দুর্নীতি ক্রমেই ডালপালা বিস্তার করছে এবং স্বাস্থ্যসেবার পুরো প্রক্রিয়াকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এমনও অভিযোগ পাওয়া গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টাকা ছাড়া রোগী ভর্তি করা হয় না। দাবি করা অর্থ না দিলে রোগীকে জেলা শহর বা রাজধানীর হাসপাতালে রেফার করা হচ্ছে। তাতে আরো বেশি অর্থের প্রয়োজন হয়। দরিদ্র অনেক রোগীর পক্ষেই তখন মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।

এমনিতেই হাসপাতালগুলোতে মানসম্মত চিকিৎসাসেবার উপযোগী সুযোগ-সুবিধার অনেক ঘাটতি রয়েছে। ওষুধ নেই, বেশির ভাগ হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স নেই। এক্স-রে মেশিন কিংবা অতি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও নেই। আবার অনেক সময় যন্ত্রপাতি থাকলেও অচল হয়ে পড়ে থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে মেরামতের জন্য চিঠি চালাচালি চলতে থাকে। আবার বিশেষ সমঝোতায় পার্শ্ববর্তী ক্লিনিকগুলোর যন্ত্রপাতি সচল রাখতে হাসপাতালের যন্ত্রপাতি অচল করে রাখা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। অনেক হাসপাতালে সাধারণ প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার কাজটিও যথাযথভাবে সম্পন্ন হয় না। ফলে দরিদ্র রোগীদের নানা রকম ভোগান্তি পোয়াতেই হয়। আমরা আশা করি, স্বাস্থ্যব্যবস্থার এ অসঙ্গতিগুলো দূর করার প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় আরো বেশি উদ্যোগী হবে।