গুলি করে হত্যা : দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে

 

খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি, ছিনতাইসহ দুর্বৃত্তরা যেভাবে একের পর এক ভয়ঙ্কর ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে, তা একটি দেশের জন্য উদ্বেগজনক। সামগ্রিক অবস্থা আজ এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাও যেন স্বাভাবিক ব্যাপার। কেননা পত্রপত্রিকার দিকে চোখ রাখলেই দেখা যাচ্ছে, প্রতিনিয়তই দেশের কোথাও না কোথাও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে; যা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সাথে কোনোভাবেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ফলে দ্রুত এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে দেশ ক্রমাগত খারাপের দিকেই যাবে এমনটি মনে করা অযৌক্তিক নয়।

সম্প্রতি আবারো গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তথ্য মতে, ঢাকার বাড্ডায় বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগের এক নেতাসহ দুজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মারা যান। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে স্থানীয় বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করার সময় এ ঘটনা ঘটে। আর ঘটনার নেপথ্যে- কর্মসূচির আয়োজন এবং ঝুট ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিলো বলে অভিযোগ রয়েছে। আমরা বলতে চাই, এবারের ঘটনায় যখন তিন যুবক অতর্কিতে দৌড়ে এসে চেয়ারে বসে থাকা চারজনকে লক্ষ্য করে গুলি করেছে, তখন তারা কতোটা বেপরোয়া তা সহজেই প্রতীয়মান হয়। এর আগেও বিভিন্ন ধরনের হত্যাকাণ্ডে দুর্বৃত্তদের এমন হিংস্রতাকে প্রমাণ করে যা সবার জন্যই শঙ্কাজনক। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাসহ নানা পেশার মানুষ প্রতিনিয়তই চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে। রাস্তাঘাটে মানুষকে খুন করা হচ্ছে। ফিল্মি স্টাইলে প্রকাশ্যে দিবালোকে ঘটছে খুনের ঘটনা। এ পরিস্থিতিকে আমলে নিয়ে দুর্বৃত্তদের লাগাম টেনে ধরতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য বলেই আমরা বিবেচনা করতে চাই। অন্যথায় চরম মূল্য দিতে পারে এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থানে যখন ক্রমাগত নানা ইস্যুকে কেন্দ্র করে খুনের ঘটনা ঘটছে তখন তা পুরো জাতির জন্যই উৎকণ্ঠার বিষয়। কেনোনা এভাবে মানুষ খুন হতে থাকলে সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের স্বাভাবিকতা যেমন নষ্ট হবে, তেমনিভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতিও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

আমরা বলতে চাই, এসব খুনের দায় সরকারের এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মনে রাখতে হবে, দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। সঙ্গত কারণেই যে কোনো ধরনের হত্যাকাণ্ড রোধে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প থাকা উচিত নয়। দেশে যতো বেশি এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে থাকবে ততোই জনজীবনে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে। আর কতিপয় দুর্বৃত্তের জন্য সারাদেশের মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
স্মর্তব্য যে, দেশে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক বিচার পরিলক্ষিত হচ্ছে না, যা শঙ্কাজনক। যদি অপরাধীদের কঠোরভাবে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব না হয় তবে অপরাধ প্রবণতাও কমবে না। আমরা চাই, এ হত্যাকাণ্ডসহ অতীতের হত্যাকাণ্ড গুলোর সাথেও জড়িতদের শনাক্ত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হোক। দেশে একের পর এক খুন হবে, তদন্ত হবে কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোনো বিচার হবে না; আসামিরা থেকে যাবে ধরাছোঁয়ার বাইরে- এমনটি হতে পারে না। আমরা প্রত্যাশা করি, দেশের যে কোনো হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সঠিক তদন্ত নিশ্চিত করে যথাযথ শাস্তি প্রদানে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। একই সাথে এমন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে- যেন দুর্বৃত্তরা হত্যাকাণ্ডসহ কোনো প্রকার অপকর্ম করার সাহস না পায়।