খোশ আমদেদ মাহে রমজান

প্রফেসর . মুহাম্মদ ইউসুফ আলী: আজ ৩ রমজান। রহমত দশকের তৃতীয় দিন আজ। পূণ্যের বসন্ত-খ্যাত রমজানের অন্যতম সৌন্দর্য হলো তারাবির নামাজ। যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় তারাবির নামাজ আদায় করবে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে (বুখারি, মুসলিম)। নাযন ইবনে শায়বান (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসের একাংশে হুজুর (সা.) এরশাদ করেছেন, আল্লাহ তোমাদের ওপর রমজানের রোজাকে ফরজ করেছেন এবং আমি তোমাদের ওপরের তারাবির নামাজকে সুন্নত সাব্যস্ত করেছি। যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রোজা ও তারাবির নামাজ আদায় করবে সে এমন ভাবে গোনাহ্মুক্ত হবে যেন এই মাত্র তার মা তাকে প্রসব করলো (ইবনে মাজাহ)। তারাবির নামাজ অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। রসুল (সা.) তারাবি নামাজের ব্যাপারে ফরজ বা ওয়াজিবের মতো কঠোর নির্দেশ দিতেন না, তবে সাহাবীদেরকে এই নামাজের জন্য খুব উৎসাহিত করতেন (মুসলিম)। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রমজান মাসে রসুল (সা.) স্বীয় ঘর থেকে বের হয়ে দেখতে পান যে, মসজিদের এক পাশে কিছু সাহাবী নামাজ আদায় করছে। তিনি জিজ্ঞাসা করেন- এরা কি করছে? তাকে বলা হলো: এদের কোরআন মুখস্ত না থাকায় তারা উবাই ইবনে কা’বের (রা.) পেছনে মুকতাদি হিসেবে তারাবির নামাজ আদায় করছে। নবী করীম (সা.) বলেন, তারা ঠিকই করছে (আবু দাউদ: ২/১৩৭৭)। তারাবির নামাজের ফজিলত হুজুর (সা.) এর কাছে এতো বেশি ছিলো যে, তিনি জামাতের সাথে সাহাবীদের নিয়ে এই নামাজ বেশ কয়েক দিন আদায় করেছিলেন (ছিহাহ্ সিত্তার সকল কিতাব)। তবে এই নামাজ উম্মতের ওপর ফরয হওয়ার আশঙ্কায় তিনি পরবর্তীতে জামাতের এহতেমাম করেন নি। কিন্তু সাহাবায়েকেরাম (রা.) তখনও বিচ্ছিন্নভাবে জামাতের সাথে অথবা একাকী এই নামাজ আদায় করেছেন। সহিহ হাদিসগ্রন্থ মুয়াত্ত মালিক কিতাবে বর্ণিত আছে, হযরত উমর (রা.)-এর খেলাফতকালে সাহাবীরা রমজানে ২০ রাকাত তারাবি ও ৩ রাকাত বিতর পড়তেন। ইহাই শেষ পর্যন্ত স্থির করা হয় (মুয়াত্ত মালিক, তারাবিহ অধ্যায়)। সুনানে বায়হাকিতে ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হুজুর (সা.) রমজানে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করতেন। যাক্ওয়ান আবু আমর (র.) নবী করীম (স.)-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাঃ)-এর ক্রীতদাস ছিলেন। ওই যাক্ওয়ান রমজান মাসে তারাবির নামাজ পড়তেন এবং আয়েশা (রা.) তার পেছনে অন্যান্যদের সাথে মুকতাদী হয়ে নামাজ পড়তেন অথবা তার কোরআন পাঠ শুনতেন (মুয়াত্ত মালিক, তারাবি অধ্যায়)। সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকেই দীর্ঘ চৌদ্দশত বছর যাবত মক্কা মোকাররমা ও মদিনা মনোওয়ারার হারামাইন শরিফে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ এবং ৩ রাকাত বিতর নামাজ জামাতে আদায় হয়ে আসছে। তাই আসুন, আমরা সবাই রমজানের তারাবির নামাজ যথাযথভাবে আদায় করি এবং মহান আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্য হাসিল করি। (লেখক: অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়)।