খোশ আমদেদ মাহে রমজান

 

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউসুফ আলী: আজ ১৭ রমজান। মহিমান্বিত ও পূণ্যস্নাত মাহে রমজানের মাগফেরাতের দশকের আজ সপ্তম দিন। তাকওয়া অর্জনের সাথে সাথে আত্মসংযম, সহানুভূতি, সহমর্মিতা ও ধৈর্যধারণের শিক্ষা দেয় এই পবিত্র রোজার মাস। রোজার মাধ্যমে ভূখা-নাঙ্গা ও গরিব মানুষের কষ্টের কথা মনে আসে। পিপাসা ও ক্ষুধার যে কি জ্বালা তা রোজার মাধ্যমে কিছুটা অনূভব করা যায়। এতে ক্ষুধার্ত ও বিপদগ্রস্তদের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা পয়দা হয়। হযরত ইউসুফকে (আঃ) লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো- আপনি ভুখা থাকেন কেন, অথচ আসমান ও জমিনের ধন-ভাণ্ডার তো আপনার করায়ত্ত? তিনি বললেন, আমি আশঙ্কা করি, পেট ভরে আহার করলে ভুখাদেরকে ভুলে যাবো। এছাড়া, রোজা আমাদেরকে খানা-পিনাতে কম খরচের শিক্ষা দেয়। রোজার কারণে ব্যয় কমে যায় এবং খরচ বেঁচে যায়। বেঁচে যাওয়া অতিরিক্ত অর্থ আমরা গরিবদের মাঝে দান-খয়রাত করে দিতে পারি। কিন্তু আমাদের বেলায় ঘটে তার উল্টো। রোজার মাসে বাজেট ঘাটতি পড়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে এটা কিছুতেই রোজার শিক্ষা হতে পারে না। আমাদের উচিত রোজার মাসে অতিরিক্ত খরচ থেকে কিছু কিছু বাঁচিয়ে দুস্থ ও অভাবীদের সাহায্য করা এবং তাদের কষ্টের সাথে কিছুটা হলেও সহমর্মিতা প্রকাশ করা। এক দীর্ঘ হাদিসের এক অংশে হুজুর (সাঃ) বলেন, রমজান মাস সবরের মাস। আর সবরের বিনিময়ে রয়েছে জান্নাত। এটিহা সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস। এই সেই মাস যাতে মুমিনের রিজিক বিদ্ধ করা হয়। যে এই মাসে কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, এটা তার জন্য গুনাহ মাফ এবং দোজখের আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে। এছাড়া ইফতার করানোর কারণে সে রোজাদারের সমান সওয়াব লাভ করবে যদিও তার সওয়াব কম করা হবে না। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, আমাদের প্রত্যেকে তো এই সামর্থ্য রাখে না যে রোজাদারকে পরিপূর্ণভাবে ইফতার করাবে? হুজুর (সাঃ) এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা এই সওয়াব দান করবেন যদিও সে কোনো রোজাদারকে ইফতার করায় একটি খেজুর, এক ঢোক পানি অথবা এক চুমুক দুধ দ্বারা। আর যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে তৃপ্তি সহকারে আহার করাবে তাকে আল্লাহ তায়ালা আমার হাউজে কাওছার হতে এমন পানি পান করাবেন যাতে জান্নাতে প্রবেশের পূর্ব পর্যন্ত আর কোনো পিপাসা লাগবে না। এটি এমন মাস যার প্রথম দিকে রহমত, মধ্যভাগে মাগফেরাত এবং শেষ দিকে জাহান্নাম থেকে নাজাত রয়েছে। যে এই মাসে দাস-দাসীদের ওপর কাজের ভার লাঘব করে দেবে আল্লাহ পাক তাকে মাফ করে দেবেন এবং দোজখ থেকে মুক্তি দিবেন (বায়হাকি শো’আবুল ইমান, ইবনে হিব্বান, তারগিব)। তাই আসুন, আমরা এই মাসে অপরের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতা ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিই এবং আল্লাহর মাগফেরাত লাভে ধন্য হই।