খোশ আমদেদ মাহে রমজান

 

মুহাম্মদ ইউসুফ আলী: আজ ৫ রমজান। মাহে রমজানের প্রাচুর্য সম্ভার গুনে-গেঁথে শেষ করা যাবে না। এ মাসের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে- এর প্রথম দশক রহমতের। মূলত আল্লাহ্র রহমত সর্বক্ষণ বর্ষিত হয়। মাঝে রমজানে তার মাত্রা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়, খাস করে এ রহমত বর্ষণের মাত্রা রমজানের প্রথম দশ দিন অফুরন্ত বরকত সম্ভারে পরিপূর্ণ থাকে; যা মাগফেরাত ও নাজাতের দিকে আগুয়ান করে দেয়। রহমত শব্দের অর্থ অনুগ্রহ, অনূকম্পা, দয়া, করুণা, কৃপা। আল্লাহ সত্তাবাচক নাম অর্থা ইসেম জাত একটিই আর সেই মুবারক নামই হচ্ছে আল্লাহ্ তার গুণবাচক নাম অর্থাৎ ইসেম সিফাত অনেক, যার মধ্যে রহমান-রহিম এ দুটি গুণবাচক নাম তার দয়া-গুণের সম্যক পরিচয় বহন করে। কোরআন মজিদে ১১৪ বার উচ্চারিত বিসিমল্লাহির রহমানির রহিম- এ রহমান-রহিমের ব্যবহার লক্ষ্যণীয়। সূরা ফাতিহাতেও আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিনের পরেই আর রহমানির রহিম উচ্চারিত হয়েছে।

সূরা তহার ৫ নম্বর আয়াতে কারীমায় ইরশাদ হয়েছে, আর্-রহমানু আলাআরিশস্ তাওয়া- করুণাময় (রহ্মান) আরেশ সমাসীন। উপরোক্ত আয়াতে কারীমাতে আল্লাহ্ জাল্লাশানুহুর দয়া-গুণের মহত্ব ও বিরাটত্ব ফুটে উঠেছে। কোরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে, বল, আসমান ও জমিনে যা আছে তা কার? বল, আল্লাহই। রহমত দান করাকে তিনি নিজের কর্তব্য স্থির করে নিয়েছেন। (সূরা আন ‘আম: আয়াত-১২)।

আল্লাহ রহমত হতে নিরাশ না হতে নির্দেশ দান করা হয়েছে। আল্লাহ্ জাল্লাশানুহু ইরশাদ করেন, হে আমার বান্দাগণ, তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছে- তারা নিরাশ হয়ো না আল্লাহ রহমত হতে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সমুদয় গুনাহ্ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।- (সূরা যুমার: আয়াত-৫৩)। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, আল্লাহ্ বলেন, আমার রহমত আমার গজবকে ছেড়ে গেছে। (হাদিসে কুদসি)

ইলমে তাসাওউফে রহমতের ফয়েজ নামক একটি সবক আছে। তরিকতের নিয়ম অনুযায়ী খতম শরিফ পড়ে ও সওয়াব রিসানি করে এ ফয়েজ রপ্ত করবার মানসে বাম স্তনের দু আঙুল নিচে অবস্থিত কলেবর দিকে গভীরভাবে মনোনিবেশ করে নিয়ত করতে হয়, আমি আমার কলেবর তরফ মুতাওয়াজ্জাহ্ আছি। আমার কল্ব পীর সাহেব ও দাদা পীর সাহেব কেবলার কলেবর অসিলায় আল্লাহ্ তায়াআলার পাঁচ মুবারক নাম ইয়া আল্লাহু, ইয়া রহ্মানু, ইয়া রহিমু, ইয়া হাইয়্যু, ইয়া কাইয়ুমু-এর তরফ মুতাওয়াজ্জাহ্ আছি। এ পাঁচ মুবারক নাম থেকে রহ্মতের ফয়েজ আমার কলেব আসুক। এ নিয়ত করে একাগ্রচিত্তে গভীর মনোযোগ ও মুহব্বত সহকারে উপরোক্ত পাঁচ মুবারক নাম নিঃশব্দে অনুধ্যানের সাথে উচ্চারণ করতে হয়। এ সবক যথাযথভাবে সত্যিকার শিক্ষক তথা হক্কানি পীরের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে অনুশীলন করতে পারলে আল্লাহ রহমতের অফুরন্ত সৌরভ লাভ করা সম্ভব হয় এবং রহমতের সার্বিক তাত্পর্য বাস্তব অনুভব দ্বারা দর্শন করা যায়। এ ফয়েজের নিয়মেই নিয়তের হেরফের করে কাশফুল কুবুর, কাশফুল আর্ওয়াহ্, কাশফুল কুলুব প্রভৃতি বিভিন্ন কাশফ লাভের জন্য অনুশীলন করতে হয়। কাশফুল কুবুরের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির অবস্থা প্রত্যক্ষ করা সম্ভব হয়। এ ফয়েজ অনুশীলনের মাধ্যমে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের জিয়ারত নসিব হয়ে থাকে।

মাহে রমজান রহমতের মাস। এ মাসে একটি ভালো কর্ম করলে দশগুণ সওয়াব পাওয়া যায়। এ মাসের বরকত লাভ থেকে যারা বঞ্চিত হয় তারা সত্যিকার অর্থেই হতভাগা।