খেলাপি ঋণ আদায়ে আরো কঠোরতাই কাম্য

নতুন নতুন খেলাপি ঋণের সাথে দীর্ঘদিনের অনাদায়ী খেলাপি ঋণ শিল্পখাতে নতুন বিনিয়োগ এবং ব্যাংকিংখাতের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গাভাব ফিরিয়ে আনতে চরম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ জুন মাসের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫২ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এ সময় ব্যাংক খাতে বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ছিলো ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। ২০১৪ সালের জুন শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিলো ৫১ হাজার ৩৪৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, যা ওই সময়ের বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

ঋণখেলাপির এ সংস্কৃতি অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। প্রচুর খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলো ঋণের সুদের হার খুব বেশি কমাতে পারছে না। এছাড়া ব্যাংকগুলো নতুনভাবে বিনিয়োগও করতে পারছে না। বাধ্য হয়ে আমানতের সুদের হার কমিয়ে দিয়েছে ব্যাংকগুলো। কয়েকটি বড় ঋণ জালিয়াতির প্রেক্ষাপটে চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আমানতকারীদের অনাস্থা সৃষ্টি করেছে, যার কারণে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আমানতকারী হিসেবে আবির্ভূত হয় আন প্রোডাক্টিভ খাত যেমন সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছেন, সঞ্চয়পত্র এবং সরকারি বন্ডের অতি চাহিদা (১৩ গুণ প্রায়) বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ এবং বেসরকারি খাতের বিকাশকে চরমভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে। সেই সাথে ব্যাংক আমানতের সুদ কমিয়ে সঞ্চয়পত্র এবং বন্ডের সুদ বাড়ানো হয়েছে। খেলাপি ঋণ আদায়ে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা করা হচ্ছে। নানা জটিলতার কারণে তা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়। এ ছাড়া অর্থ ঋণ আদালতে মামলা নিষ্পত্তির পর গ্রাহক আবার উচ্চ আদালতে রিট করে অর্থ আদায় প্রক্রিয়া ঝুলিয়ে দেন। গ্রাহক ঋণ নেয়ার সময় জামানতকৃত সম্পত্তির পাউয়ার অব অ্যাটর্নি ব্যাংককে দেন। তবে আইনি বাধার কারণে মামলা নিষ্পত্তি ছাড়া সম্পত্তি বিক্রি করা যায় না। অথচ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে জামানতকৃত সম্পত্তি বিক্রির ক্ষেত্রে সরাসরি ব্যাংকের ক্ষমতা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, খেলাপি ঋণ কমাতে হলে বাংলাদেশে বিদ্যমান আইন সংশোধন করে সম্পত্তি বিক্রির ক্ষমতা সরাসরি ব্যাংককে দিলে খেলাপি ঋণ আদায় আরও গতি পাবে। ব্যাংকগুলোর মাত্রাতিরিক্ত মুনাফার টার্গেটও খেলাপি ঋণ বাড়ার অন্যতম কারণ। একই সিকিউরিটি এবং একই ব্যবসার প্রসারতা নিয়েই একজন গ্রাহক একটি ব্যাংক থেকে অন্য একটি ব্যাংকে এক বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণ ঋণ পান। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অধিক মাত্রায় মুনাফার প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। ব্যাংকগুলোর মধ্যে ঋণ প্রদান ও ঋণ আদায়ে একটি সমন্বয় থাকতে হবে। খেলাপি ঋণ আদায়ের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করাই হবে দেশের জন্য কল্যাণ।