ক্ষমতার মসনদে নরেন্দ্র মোদি

 

ভারতেরপঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদির শপথ অনুষ্ঠানটি ছিলোনানা দিক থেকে ব্যতিক্রমধর্মী। দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনের উন্মুক্ত স্থানেজাঁকজমক ও জৌলুসপূর্ণ এ অনুষ্ঠানে ভারতের বিভিন্ন স্তরের গুরুত্বপূর্ণব্যক্তিরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সার্ক দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফরে থাকায় নরেন্দ্র মোদির শপথঅনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি। তার পরিবর্তে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদেরস্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানেপ্রথমবারের মতো সার্কের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানোর ঘটনাটিবিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এতে ধারণা করা যায়, ভারতের নতুন সরকার প্রতিবেশীদেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী।

ভারত এ অঞ্চলের বৃহত্তমরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী। স্বভাবতই আগামী দিনগুলোয় ভারতেরসাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক কেমন হবে,তা নিয়ে এ দেশের জনগণের মাঝে কৌতূহলব্যাপক। বলার অপেক্ষা রাখে না,এ সম্পর্ক অনেকটাই নির্ভর করছে ভারতের নতুনসরকার বিশেষত প্রধানমন্ত্রীর ওপর। এটা ঠিক,সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবেসেখানে এককভাবে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর সবকিছু নির্ভর করে না। তবেএবারের অবস্থা কিছুটা ভিন্ন। বলা যায়, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদিরপ্রার্থিতার কারণেই নির্বাচনে বিজেপির বিরাট বিজয় সম্ভব হয়েছে। তাছাড়াসরকার গোটা ভারতে গুজরাট মডেল অনুসরণ করতে চাইলে সেক্ষেত্রে মোদির ভূমিকাইহবে প্রধান। উপরন্তু মোদি ইতোমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছেন, পররাষ্ট্রনীতির ওপরতার থাকবে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বিষয়ে তিনি কীভূমিকা রাখেন,সেদিকেই নিবদ্ধ থাকবে আমাদের দৃষ্টি।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক নানা বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল।

ভারতে সাম্প্রদায়িকতাপ্রসূতকোনো ঘটনা ঘটলে এ দেশে তার প্রতিক্রিয়া হয়। ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের তিনদিকেই ভারতের অবস্থান হওয়ায় দেশটির সাথে আমাদের রয়েছে বিশাল সীমান্তএলাকা। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত প্রায় সব নদীর উৎস ভারতে। এ বিষয়গুলোসরাসরি দুদেশের সম্পর্ক নির্ধারণ করে। এর বাইরেও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানাবিষয় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে প্রভাবিত করে থাকে। ভারতের বিদায়ী কংগ্রেসশাসনামলে দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিস্তার পানি বণ্টন ও সীমান্ত সমস্যাসহ দুদেশেরমধ্যে অমীমাংসিত অনেক সমস্যারই সমাধান হয়নি। বন্ধ হয়নি সীমান্তে বিএসএফেরগুলিবর্ষণ ও বাংলাদেশি হত্যার প্রবণতাও। আমরা স্বভাবতই চাইব,নরেন্দ্রমোদির শাসনামলে এ সমস্যাগুলোর সমাধান হবে। ভারতের নতুন মন্ত্রিসভায় সুষমাস্বরাজ ও উমা ভারতীর মতো নেতার স্থান পাওয়াকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখতেচাই। বিশেষ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সুষমা স্বরাজের নিয়োগ দুদেশেরঅমীমাংসিত বিষয়ের নিষ্পত্তির ব্যাপারে আমাদের আশাবাদী করেছে। এর আগেও তিনিমন্ত্রী ছিলেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।বাংলাদেশের সাথে তার সম্পর্ক ভালো ছিলো। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবেদায়িত্ব পালনকালে তিনি বাংলাদেশের সাথে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর বিষয়ে দৃষ্টিদেবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস। পানিসম্পদমন্ত্রী হিসেবে উমা ভারতীওবাংলাদেশের সাথে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় জোরালো ভূমিকা পালন করতে পারেন।

নরেন্দ্রমোদির মন্ত্রিসভার একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো,তিনি এটিকে যথাসম্ভব ছোটরেখেছেন। ৪৫ সদস্যের মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী ২৩ জন,স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্তমন্ত্রী ১০ জন এবং প্রতিমন্ত্রী ১১ জন। মন্ত্রিসভায় কোনো বাঙালি স্থান নাপাওয়ায় ধারণা করা যায়, নির্বাচনে বিজেপিবিরোধী রাজ্যগুলো এক্ষেত্রেউপেক্ষিত হয়েছে। মন্ত্রিসভায় একজন মাত্র মুসলমান সদস্য স্থান পাওয়ারবিষয়টিকেও সেভাবে দেখা যেতে পারে। স্বভাবতই এটি ভারতের মুসলিম জনগোষ্ঠীরমনে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। তারপরও প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা,বিজেপি সরকারের শাসনামলে ভারতে শান্তি,সম্প্রীতি ও স্থিতিশীলতা বজায়থাকবে। ভারতের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি রইল আমাদেরশুভেচ্ছা।