কেরুজ খামারের আখ নিশ্চয় বেড়ায় খায়

কেরুজ জমিতে এখন আখের আবাদ কেরুজ কর্তাদের পরিচর্যা-তদরকিতে লাভ হয় না। অথচ পাশের জমিতে বেসরকারি বা ব্যক্তিগতভাবে করা আখের আবাদে লোকসানের কথা ভাবাই যায় না। পাশাপাশি জমিতে অভিন্ন আবাদে এই আকাশ-পাতাল ফারাক কেন? কেনই বা কেরুজ জমির আখ কাটার সময়ে আগুন লাগে? জবাবগুলো এলাকার সাধারণ কৃষকদের কাছে স্পষ্ট। অথচ কর্তাদের কাছে অস্পষ্ট। কেন? কারণটাও বোধ করি বোদ্ধাদের কাছে পরিষ্কার।
কেরু অ্যান্ড কোং (বাংলাদেশ) লিমিটেড বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের একটি প্রতিষ্ঠান। চুয়াডাঙ্গার একমাত্র ভারি শিল্প। এ প্রতিষ্ঠানটি এলাকার কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের যেমন জোগান, তেমনই এলাকার অর্থকরি ফসল আখ কৃষকদের স্বচ্ছল করতে সহায়ক। এই জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটি হুমকির মুখে। কারণ, আখের আবাদে ও মাড়াইয়ে গুনতে হয় মোটা অঙ্কের লোকসান। ভাগ্যিস ডিস্টেলারি ছিলো। এ বিভাগের লাভ আর আখের আবাদ মাড়াইয়ের লোকসান অনেকটাই সামাল দেয়। তা না হলে অনেক আগেই বিরাষ্ট্রীয়করণ অথবা অস্তিত্ব বিলীন অনিবার্য হয়ে পড়তো। অবশ্য মাঝে মাঝে কেরুজ জমিতে আখের আবাদ লাভজন করার তাগিদ দেন ঊর্ধ্বতন কর্তারা। সেই তাগিদে কতটুকু সুফল মেলে তা তাগিদদাতা কর্তাও খতিয়ে দেখেন বলে মনে হয় না। সে কারণে তদারক কর্তাকে নিয়েও নানা কৌতুক প্রচলন রয়েছে। যা আখ চাষিদের হাস্যরসের খোরাক। কৌতুকের কৃঞ্চিতও কি কর্তার কর্ণপাত হয় না?
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান একেএম দেলোয়ার হোসেন কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ৯টি খামারের সংশ্লিষ্ট সকলকেসহ কেরুজ কর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, কেরু অ্যান্ড কোম্পানির এক হাজার ৬ একর জমিতে আখের আবাদ পরিচর্যার মাধ্যমে লাভজনক করতে হবে। অন্যথায় ব্যবস্থা নেয়ার কথাও কৌশলে বলেছেন তিনি। এতে কি সুফল মিলবে? এলাকার সাধারণ আখচাষি কারো কারো অভিন্ন অভিমত, ওই তাগিদে কেরুজ খামারের জমিতে আখের আবাদ লাভ এনে দেবে না। যার প্রধান কারণ দুর্নীতি। আখ রোপণ থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত পরিচর্যার নামে বরাদ্দকৃত অর্থ-উপকরণ নিয়ে যা হয় তা ঊর্ধ্বতন নীতিবান কোনো কর্তার দৃষ্টিগোচর হলে তিনি কারোরই বোধ হয় চাকরি রাখতেন না। ক’জন শ্রমিকের স্থলে ক’জনকে দিয়ে দায়সারা গোছের কাজ করিয়ে ক’জনের মজুরির টাকা কে তোলেন, কতটুকু সার দেয়া হয় আর কতটুকু ভরা হয় পকেটে, তা দূরে বসে দেখা দুষ্কর বলেই ছদ্মবেশে কাছে দাঁড়িয়ে স্বচক্ষে দেখা দরকার।
একই জমিতে বার বার আখের আবাদ বাঞ্ছনীয় নয়। জমির উর্বরা ফেরাতে বিরতির পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ প্রয়োজন। কেরু অ্যান্ড কোম্পানির খামার বিভাগীয় কর্মকর্তারা এ বিষয়টি নিশ্চয় জানেন। কারণ তারা কৃষিরই ছাত্র। তাহলে তাদের পরিচর্যায় জমি উর্বর হয় না কেন? কেনই বা আখের আবাদে পাশের জমির অশিক্ষিত আখচাষির আখ কেরুজ আখের চেয়ে ভালো হয়? কেরুজ খামারের আখ নিশ্চয় বেড়ায় খায়। ক্ষেত খাওয়া ওই বেড়া দিন দিন হয়েছে বড় বেয়াড়া।