কারিগরি শিক্ষার দুরবস্থা দূর করা জরুরি

সৃজনশীল পদ্ধতিতে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছাড়াই এবার কারিগরি শিক্ষবোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ৫টি বিষয়ে সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্ন থাকছে। অথচ শিক্ষকরাই এ পদ্ধতিতে প্রশ্ন প্রণয়নসহ বিস্তারিত প্রশিক্ষণ পাননি। কারিগরি শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থায় এ হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতির জন্য দায়ি কে?

কোনো দরিদ্র পরিবারের শিশু যাতে দ্রুততম সময়ে পরিবারের অসচ্ছলতা দূর করতে ভূমিকা রাখতে পারে- এটি বিবেচনায় নিয়েই কারিগরি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। যেহেতু এ কার্যক্রমের সাথে যুক্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থীর আনুষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন তুলনামূলক সংক্ষিপ্ত, তাই এ স্বল্প সময়ে তারা জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর সাথে পরিচিত হওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ পাবে- এটাই প্রত্যাশিত। সর্বশেষ প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতিতেও এ বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। বিশেষ করে সর্বস্তরের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে শিল্প-কারখানায় বাস্তব প্রশিক্ষণের বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্বে বর্তমানে অদক্ষ শ্রমিকের বাজার সংকুচিত হওয়ার ফলে দক্ষ জনশক্তি তৈরির বিষয়টিও বারবার আলোচনায় আসছে। এ অবস্থায় কারিগরি শিক্ষার সাথে যুক্ত শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষের বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া জরুরি হলেও বাস্তব চিত্রটি একেবারেই ভিন্ন।

চালুর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও সৃজনশীল পদ্ধতিতে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছাড়াই গতকাল পরীক্ষায় বসতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। শিক্ষকরাও প্রশ্নপত্র প্রণয়নসহ সংশ্লিষ্ট অন্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ পাননি। এ অবস্থায় যে প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দেয় তা হলো, যেখানে নতুন কোনো পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষকরাই ভালোভাবে দক্ষতা অর্জন করতে পারছেন না, সেখানে শিক্ষার্থীরা কতোটা দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে? এ সমস্যা কেবল কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই নয়, একই সমস্যা রয়েছে দেশের অন্য অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও। বিষয়টি বিবেচনায় নিলেই দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষকের মান সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়। শিক্ষকদের এ দুর্বলতা দূর করতে অব্যাহত প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের যত ব্যাখ্যাই থাক না কেন, এতে যে ক্ষতি হচ্ছে তা পূরণের উপায় কী? গত তিন বছরে কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না করার প্রেক্ষাপটে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা এ ক্ষেত্রে কতোটা আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছেন তা দৃশ্যমান নয়। আমাদের দেশে শিক্ষকদের একটি ঐতিহ্য রয়েছে- তা হলো জ্ঞানের আলো ছড়াতে নিজেকে অকাতরে বিলিয়ে দেয়া। বর্তমানে অনেক শিক্ষকই উল্লিখিত গুণটি ধরে রাখতে পারছেন না। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকরা সব স্বার্থের ঊর্ধ্বে থাকবেন, এটাই কাম্য।

সরকার শিক্ষকদের জীবনমানের পরিবর্তনে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব পদক্ষেপের সুফল পেতে যাতে দেরি না হয় সে ব্যবস্থাও করতে হবে। বেসরকরি খাতের শিক্ষকরাও যেন বঞ্চিত না হয়, সেদিকেও কর্তৃপক্ষকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। শিক্ষকদের আন্তরিকতা যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সে ব্যাপারেও তাদের সজাগ থাকতে হবে।