করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সর্বাত্মক সচেতনতা

চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে সৃষ্ট প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (২০১৯-এনসিওভি-করোনা) এরই মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপ-আমেরিকার ১২টি দেশে পৌঁছে গেছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে; এমনকি আমাদের পাশের দেশ ভারত ও নেপালেও এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। অনেক ধরনের করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব থাকলেও মানুষ মূলত ৬ ধরনের করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়।
করোনাভাইরাসের সঙ্গে বিজ্ঞানীদের পরিচয় গত শতকের ছয়ের দশকে। এরপর বহু ধরনের করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। এতো দিন পর্যন্ত জানা ছিলো এর মধ্যে মাত্র ছয়টি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। এখন যেটি সংক্রমিত হচ্ছে এ ভাইরাসটি নতুন। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ২০০২ সালে সার্স বা সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম নামে যে ভাইরাসের সংক্রমণে পৃথিবীতে ৭৭৪ লোকের মৃত্যু হয়েছিলো, সেটিও একধরনের করোনাভাইরাস। সে সময় ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলো আট হাজারের বেশি মানুষ। ২০১২ সালে মার্স বা মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম করোনাভাইরাস আক্রান্ত দুই হাজার ৪৯৪ জনের মধ্যে ৮৫৮ জনের মৃত্যু হয়। এ পরিবারের নতুন সদস্য ‘নোভেল’ করোনাভাইরাসের মানবদেহে সংক্রমণের বিষয়টি প্রথম শনাক্ত করা হয় ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ভাইরাসটির নাম দেয় ২০১৯-এনসিওভি। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, গত ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রায় চার হাজার ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। আরেকটি গবেষণা বলছে, একজন থেকে গড়ে আড়াইজনের মধ্যে এ ভাইরাস সংক্রমিত হচ্ছে। আর ল্যানক্যাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের ধারণা, আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে উহান শহরেই করোনাভাইরাস সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা এক লাখ ৯০ হাজারে উঠতে পারে। আর সেই সংক্রমণ চীনের অন্যান্য শহরে ছড়াবে। বাদ যাবে না অন্য দেশগুলোও। চীনে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১০৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও থাইল্যান্ডে ১৩ ও ভারতে এক তরুণীর মারা যাওয়ার খবর গণমাধ্যমে গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের ঘটনা ধরা পড়েছে অন্তত ১২টি দেশে। চীনের সঙ্গে যোগাযোগ বেশি থাকায় বাংলাদেশও নতুন এ ভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া ও পরিবেশের কারণে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি। সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি গড়ে তুলতে হবে সর্বাত্মক সচেতনতা। সবার সহযোগিতায় বাংলাদেশ করোনাভাইরাস মুক্ত থাকবে।