কবির স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা

 

আজ ২৫ বোশেখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন। ২৫ বোশেখের গুরুত্বআমাদের জীবনে অপরিসীম। এক কথায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির জীবনেএমনভাবে জড়িয়ে আছেন যাতে প্রতিদিন তাকে স্মরণ করতে হয়।১৪২১ সালেরআজকের ২৫ বোশেখ পালিত হচ্ছে তার জন্মের একশতেপ্পান্নতম বার্ষিকী।রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন পালন করা হচ্ছে বহুকাল ধরে। রবীন্দ্রনাথ যখন জীবিততখন থেকে শান্তিনিকেতনে তার জন্মদিন উদযাপন করা হতো। তারপর ধীরে ধীরেতৎকালীন অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন স্থানে এ উৎসব পালিত হতে থাকে। দু বাংলারনানা শহরে,গ্রামে,স্কুলে,ক্লাবে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালিত হতে থাকে। ভারতবিভক্তির পর তৎকালীন পূর্ববাংলায় বেশ গুরুত্বের সাথে রবীন্দ্রজয়ন্তীপালিত হতে থাকে। এভাবেই ১৯৬১ সালে আসে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী। সে সময়পাকিস্তানি শাসক শ্রেণির বিরোধিতার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেও এ দেশের মানুষপালন করেছে প্রিয় কবির শততম জন্মদিন। এক পর্যায়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানেরবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ করা হয়। সে সময় সকল শ্রেণির মানুষের পক্ষ থেকেতীব্র প্রতিবাদ ওঠে। মানুষ এ নিষিদ্ধের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়। এ দেশেরমানুষ তাদের সুখে-দুঃখে,আন্দোলনে-সংগ্রামে যে কবিকে কাছে পেয়েছে;যারকবিতা ও গান ব্যক্তিগত ও সমাজ জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে মানুষকেঅনুপ্রাণিত-উদ্দীপ্ত করেছে ও সান্ত্বনা জুগিয়েছে এ দেশের মানুষ সে কবিকেকখনও ছাড়তে পারেনি। বিশেষ করে জাতীয় জীবনের নানা বিপর্যয়ে,ঘোর দুর্বিপাকেরদিনে তাকে সাথে রেখেছে,তার সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখেছে,রেখেছেঅন্তরের ভালোবাসায়। শিলাইদহ,শাহজাদপুর ও পতিসরের এ দেশে বিশাল মর্যাদারআসন পান রবীন্দ্রনাথ। তার অমর সৃষ্টি ‘আমার সোনার বাংলা’কে জাতীয় সঙ্গীতকরা হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রাণের উচ্ছ্বসিত আবেগের সাথে প্রতিবছরনানাভাবে ব্যক্তিগত,সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হয়েছে ও হচ্ছেরবীন্দ্র জন্মোৎসব। একই সাথে পালিত হচ্ছে তার প্রয়াণ দিবস বাইশে শ্রাবণও।রবীন্দ্রনাথের প্রতি শ্রদ্ধায় এবং বিশেষ করে তার সম্পর্কে অধিকতরচর্চ্চার জন্য বাংলাদেশ সরকার রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবংপশ্চিমবঙ্গে শান্তিনিকেতনে ‘বাংলাদেশ ভবন’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সমালোচকদের মতে,রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি। এ ভাষার উন্নয়নেতার অবদান তুলনাহীন। রবীন্দ্রনাথ এ ভাষাকে বিশ্ব অঙ্গনে পরিচিত করিয়েছেন।চিন্তায়-মননে,আনন্দে,বিষাদে তিনি বাঙালির নিত্যসঙ্গী। আমাদের জীবনে আলোরপথে,জ্ঞানের পথে,শিক্ষা তথা আনন্দের পথে চলার প্রেরণা তিনি। তিনি উৎসাহযোগান অন্ধকার দূর করার পাশাপাশি কূপমণ্ডকতা ও সঙ্কীর্ণতা দূর করতে। তিনিআমাদের চেতনাকে আলোকিত আনন্দময় সত্যের পথে চলার সাহস জোগান।রবীন্দ্রনাথ শুধু বাংলা ভাষার একজন কবি,লেখক,গীতিকার,দার্শনিক বা অন্যআরও বিশেষণে অভিহিত মহাপুরুষই নন,তার সবচেয়ে বড় পরিচয়,আমাদের সবার সাথে তার সম্পর্কের কথা তিনি নিজেই বলে গেছেন। তার সে কথাটি হলো,‘মোর নাম এইবলে খ্যাত হোক/আমি তোমাদেরই লোক।আসলেই তাই। আমাদের প্রতিদিনের জীবনেতাকে প্রতিদিন একবার নয়, বহুবার স্মরণ করতে হয়। আমাদের প্রাণে,চিন্তায়,চেতনায়,মননে, রুচিতে তিনি সর্বক্ষণ উপস্থিত। আমাদের প্রাণের ভালবাসার একবির স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।