কবর থেকে কাফন চুরি যেহেতু গায়েবি নয়

 

এক সময় ওঝা কবিরাজরাই রোগীদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলতো। সেই আত্মবিশ্বাসের ওপর ভর করে কোনো কোনো রোগী সুস্থতাও পেতো। সেটাই মূলত অন্ধ বিশ্বাসের বীজ। সেই বীজেরই অঙ্কুরিত অদৃশ্যমান বিষবৃক্ষের শাখা প্রশাখা অনেককেই অন্ধ করে রেখেছে। তা না হলে কবর থেকে কাফন চুরি কেন?

 

সময় বদলেছে। আকাশে বাতাসে বিজ্ঞানের ছোঁয়া। এ যুগেও যদি অন্ধবিশ্বাসের ওপর ভর করে শ্মশানে বসে নানা সাধনায় সিদ্ধিলাভের দাবি করা হয়, কবর থেকে কাফন চুরি করে তা দিয়ে দুরারোগ্য রোগ দূর হয় বলে কেউ দাবি করে তা হলে বুঝতে হবে, সমাজে সচেতনতার আলোর যথেষ্ট অভাব। কুসংস্কার নামক অন্ধকারাচ্ছন্নতা থেকে মুক্ত করতে না পারলে এক সময়ের রূপকথা বা কল্পিত গল্পের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা চিকিৎসা পদ্ধতি দূর হবে কীভাবে? সমাজে অবশ্যই সচেতনতার আলো ছড়াচ্ছে, দূর হচ্ছে কুসংস্কারাচ্ছন্নতা। তবে যে হারে ছড়ানো দরকার সে হারে কিন্তু আলো ছড়াচ্ছে না। সমাজের আলোকিত মানষগুলোই সমাজে আলো ছড়ায়।

 

সচেতনতার আলো ছড়াতে হবে। এ আলো ছড়ানোর দায়িত্ব অবশ্যই সমাজের সচেতন মানুষগুলোর। এতে কিছু হয় না। ঝড়ে বক পড়ে ওঝা কবিরাজের জারিজুরি বাড়ে। সমাজে প্রচলিত এ প্রবাদ কিন্তু কাকতালীয় নয়, যতোটা কাকতালীয় ওই ওঝা কবিরাজদের কথিত চিকিৎসায় সুস্থতা পাওয়া। অথচ সেই কাকতলীয়তার ভরেই দিব্যি ওরা বাণিজ্য করছে। বুঝলে নিশ্চয় কবর থেকে কাফন চুরি করতো না। বোঝাতে হবে, ভুল পথ থেকে সঠিক পথে ফেরাতে অবশ্যই সচেতন মানুষগুলোকে সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে। প্রকৃত শিক্ষা মানুষকে সচেতন করে। বাস্তব অবাস্তবের পার্থক্য স্পষ্ট করে। যারা শ্মশানের কয়লা, কবরের মাটি দিয়ে অনেক কাজ হয় বলে দাবি করেন, তাদের মধ্যে বাস্তব অবাস্তব পার্থক্য করার জ্ঞানের অভাব তো রয়েছেই।

 

কবর থেকে কাফন চুরি যেহেতু গায়েবি নয়, সেহেতু চোর শনাক্ত করে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার। একই সাথে কবর থেকে চুরি করা কাফন দিয়ে জারিজুরি দেখানোর নামে নাটক করা ভণ্ডদের মুখোশ খুলে দিতে সমাজের সচেতন যুব সমাজকেই দায়িত্বশীল হতে হবে।