কপালের ওপর দায় চাপানোর আগে একটু ভাবুন

 

যে মেয়ের সুখের কথা ভেবে অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ের আসনে বসালেন পিতা, সেই মেয়ের অকালমৃত্যুর পর তিনি নিজেকে কি বলে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। নিশ্চয় বলছেন- এসব কপালেরই লেখন! কপালের ওপর দায় চাপানোর আগে সকলকেই কর্মের দোষ খোঁজা উচিত নয় কি?

চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার গোয়ালবাড়ি গ্রামের শোভা ছিলো স্কুলছাত্রী। তাকে বিয়ে দেয়া হয় ইচ্ছের বিরুদ্ধে। বিয়ের তিন দিনের মাথায় পিতার বাড়িতেই বিষ পান করে। ৪ দিন পর শোভা মারা গেছে। অবশ্যই কোনো পিতা-মাতা তার সন্তানের মন্দ চান না। ভালোটাই চান। ভালো করতে গিয়ে অজ্ঞাতবশে বা জেদে পড়ে নিজের সন্তানকে যে অনেকেই নিজ হাতে বলি দেন তারই একটি উদাহরণ গোয়ালবাড়ির শোভা।

দেখতে রূপসী। স্কুলের যাওয়া-আশার পথে উত্ত্যক্তকারীদের হয়রানি। নিপীড়ন। না বুঝেই মন দেয়া নেয়া নিয়ে সমস্যা। এসব কারণেই অনেক অভিভাবক নিজের পছন্দের মতো পাত্র খুঁজে অপ্রাপ্ত বয়সেই মেয়েকে বিয়ের আসনে বসান। বিয়ে দিলেই যেনো চুকে গেলো ঝামেলা। কিন্তু না। যদি কোনো মেয়ে মন নেয়া-দেয়া করেই থাকে তাকে বুঝিয়ে, স্থান পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে মানসিক পরিবর্তনের বদলে জোর করে বিয়ে দেয়ার খেসারত অপূরণীয়।

আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। এরপরও নানাভাবে আত্মহত্যা প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিটি আত্মহত্যার প্রকৃত কারণ উন্মোচন করে আত্মহত্যায় প্ররোচণাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে না পারলে আত্মহত্যা প্রবণতা হ্রাস পাবে কীভাবে? গতানুগতিকভাবে পেটে যন্ত্রণা, মস্তিষ্ক বিকৃত রোগে ভুগছিলো বলে দাবি তুলে প্ররোচিত আত্মহত্যার ঘটনাও বেমালুম আড়াল হয়ে যাচ্ছে। কুফল সমাজকেই বহন করতে হচ্ছে।

দশম শ্রেণির ছাত্রী শোভার বিয়ে কোন কাজি সম্পাদন করেছিলেন? তিনি জন্মসনদ নিশ্চয় দেখেছিলেন। ওই জন্মসনদ কে কোথা থেকে আনলেন? নাকি জন্মসনদ না দেখেই কাজি অর্থের লোভে পড়ে বিয়ে পড়িয়েছেন? স্কুলছাত্রীর জন্মসনদটি কি ভুয়া? নাকি টাকার বিনিময়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকেই কোন অসাধু কর্মচারী বা কর্মকর্তা তা সরবরাহ করেছেন? এসব প্রশ্নের জবাব জানা দরকার।

বাল্যবিয়ে রোধে সভা-সেমিনারে বড় বড় বাক্য আওড়ালেই তা যে রোধ হবে না তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। অবশ্য সম্প্রতি প্রশাসন বাল্যবিয়ে রোধে বিগত যে কোনো সময়ের তুলনায় খুবই সোচ্চার। এর মাঝেও শোভার বিয়ে হয়েছে। মারা গেছে। ফলে ঘটনাটিকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। প্রশাসনকে তদন্তে নামা প্রয়োজন।

স্কুল-কলেজের পথে উত্ত্যক্ত বা যৌন হয়রানির শিকার হন ছাত্রীদের অনেকে। প্রতিকারের প্রত্যাশায় প্রশাসনের কাছে নালিশ করা অভিভাবকের সংখ্যা নিতান্তই কম। এরপরও যারা অভিযোগ করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযুক্তকে সাক্ষ্য প্রমাণ পরীক্ষা সাপেক্ষে উপযুক্ত শাস্তিও দেয়া হয়। এইতো সেদিনও দর্শনার এক যুবককে করাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। ফলে উত্ত্যক্তকারীদের কারণে বাল্যবিয়ে বলে দায় এড়ানো যায় না।

সন্তানকে অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে দিয়ে সুখের কথা ভাবার চেয়ে তাকে স্বনির্ভর হওয়ার মতো করে গড়ে তুলতেই আন্তরিক হওয়া দরকার। সন্তানের বিপথগামিতা রুখতে কড়া শাসনের চেয়ে সোহাগও যে কার্যকর ‘দাওয়ায়’ তাও দায়িত্বশীল অভিভাবকদের বুঝতে হবে।