ওরকম নির্বোধ কাজে সম্মতি নয় : শাস্তি কাম্য

 

 

কিশোর মানুষের সন্তান, পুলিশ মানুষ নয়? কিশোরকে দিয়ে বোমা বা বোমা সাদৃশ্য বস্তু উদ্ধার করালে দোষের কী? এরকম নির্বোধ প্রশ্ন কেউ কেউ করতেই পারেন। কিশোর আর পূর্ণ বয়সীর মধ্যে পার্থক্য যেমন যোজন যোজন, তেমনই পুলিশের সাথে সাধারণ মানুষের পার্থক্যও ক্রোশ ক্রোশ। কিশোরের সাথে পুলিশের তুলনা? আকাশ-পাতাল। এ পার্থক্যের জন্যই পুলিশ অফিসার একজন অবুঝ কিশোরকে দিয়ে ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্র উদ্ধার করানো দূরের কথা, হাত দেয়ার কথাই বলতে পারেন না। এরপরও কেন করালেন তিনি? পুলিশে চাকরি করেন, কোনটা করা উচিত, কোনটা করা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ, তা নিশ্চয় জানা উচিত। বোধ করি জানেনও। জেনেশুনে কেউ অন্যায় করলে তার বিচার হবে না? হয় না বলেই তো অনিয়ম অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে!

ঘরে বাইরে ঈদ প্রস্তুতির ব্যস্ততা। বেড়েছে অপরাধীদের অপরাধমূলক অপতৎপরতা। পত্রিকার পাতা খুললেই ছিনতাই, গণডাকাতি, প্রতিরোধের মুখে বোমা বিস্ফোরণের খবর দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। গতকালও দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকার প্রথম পাতার ১৭টি প্রতিবেদনের মধ্যে ৪টি শিরোনাম ছিলো ডাকাতি, ছিনতাই, ডাকাতির প্রতিরোধের মুখে বোমা বিস্ফোরণ ও ছিনতাইয়ের সময় ৪ জনকে ধরে গণপিটুনি শেষে পুলিশে সোপর্দ। একটি ছিলো অবুঝ কিশোরকে দিয়ে বোমা উদ্ধার করালো পুলিশ। এসব খবর সমাজের শান্তিপ্রিয় মানুষের অবশ্যই অপ্রত্যাশিত। পবিত্র রমজান এলেই যেমন বাজারে মূল্যবৃদ্ধি লাগামহীন হয়ে পড়ে। তেমনই অপরাধীরাও হয়ে ওঠে বেপরোয়া। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশকে বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হয়। পুলিশে অপ্রতুলতা সমাজের শান্তিপ্রিয় মানুষগুলোকে অপ্রত্যাশিত খবরে যে অনেকটাই অভ্যস্ত করে তুলেছে তা বলাই বাহুল্য। তাই বলে কিশোরকে দিয়ে বোমা উদ্ধারের ঘটনাকে নিশ্চয় অপ্রতুলতার অজুহাতে দায় এড়ানো যায় না।

বোমা নামক মারণাস্ত্রের অপব্যবহার বেড়েছে। বোমাবাজ রুখতে না পারলে সমাজকে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে। অভিযোগ আছে, প্রতিবেশী দেশ থেকেই বোমা তৈরির বারুদ পাচারকারীরা পাচার করে আনে। চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ দেশের অধিকাংশ এলাকায় রয়েছে বোমা তৈরির কারিগর। গোপনে বোমা তৈরি করে অপরাধীদের হাতে তুলে দেয়া হয়। শুধু ডাকাতি ছিনতাই রাহাজানি চাঁদাবাজির কাজেই যে বোমার ব্যবহার তাও নয়, রাজনৈতিক আন্দোলনেও বোমা ব্যবহারের দৃশ্য দেখে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে সমাজ। এখন অভ্যস্ত হতে হচ্ছে কিশোরকে দিয়ে বোমা উদ্ধার করানো পুলিশের দায়িত্বহীনতার চিত্রে। অবশ্যই বোমা ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্র। অদক্ষ কাউকে দিয়ে আর যাই হোক বোমা নড়ানো চড়ানো উচিত নয়। চোখের পলকে বিস্ফোরণে ঘটে যায় হতাহতের ঘটনা। যে পুলিশ অফিসার চুয়াডাঙ্গা দক্ষিণ হাসপাতালপাড়ার সড়ক থেকে বোমা বা বোমা সাদৃশ্য বস্তু উদ্ধার করতে গেলেন তিনি যদি তা উদ্ধারে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত না হন তা হলে গেলেন কেন? শুধু তাই নয়, তিনি যখন বোমা পড়ে থাকার খবরে ঘটনাস্থলে গেছেন তখন তার পরনের পোশাকও বোমা উদ্ধার কাজে নিয়োজিত হওয়ার উপযোগী ছিলো না। পত্রিকায় প্রকাশিত ছবিতেই তা স্পষ্ট। এটাও কি দায়িত্বহীনতা নয়?

যে হারে মানুষ বাড়ছে, যে হারে অপরাধ প্রবণতা ছড়াচ্ছে, সে হারে পুলিশে লোকবল বৃদ্ধি ও পরিবহনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা হচ্ছে না। জনসংখ্যা অনুপাতে পুলিশের অপ্রতুলতা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু অপ্রতুলতা আর কতোদিন? উন্নয়নের অন্যতম প্রথম শর্ত নিরাপত্তা। জানমালের নিরাপত্তা বিধানের জন্যই পুলিশ বিভাগ। পুলিশকে অবশ্যই যুগোপযোগী করা দরকার। যেহেতু সমাজে বেড়েছে বোমার অপব্যবহার, সেহেতু পুলিশেও দরকার বোমা উদ্ধারে পারদর্শী বিশেষ দল। যতোদিন বিশেষ দল গঠন সম্ভব নয়, ততোদিন অবুঝ শিশু-কিশোরদের দিয়ে বোমা উদ্ধার করাতে হবে? পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তা নিশ্চয় এরকম নির্বোধ কাজে সম্মতি না দিয়ে দায়িত্বহীনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। এ প্রত্যাশা আমাদের।