ওই বুলেটের চেয়ে ঘুমপাড়ানি গুলির দাম বেশি নয়

‌            দলছুট একটি হাতিকে গুলি করে মারতে হয়েছে। কেন? কৃষকদের বিঘার পর বিঘা ধানক্ষেত বিনষ্ট করার পাশাপাশি মানুষের প্রাণহানির শঙ্কায় হাতিটিকে গুলি করে মারার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যেমনটি চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার একটি গ্রামে হনুমানকে কয়েক বছর আগে গুলি করে মারতে হয় জনগণকে। যদিও বন্যপ্রাণী হত্যা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

বন্যহাতিটি ভারতের জঙ্গল থেকে দলছুট হয়ে পদ্মা পেরিয়ে ওঠে চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্তে। বিঘা বিঘা জমির ধানক্ষেত বিনষ্ট করার পাশাপাশি জনপদে ঢুকে প্রাণহানি ঘটাতে পারে আশঙ্কা দেখা দেয়। এলাকাবাসী ও সীমান্তরক্ষী বিজিবিসহ পুলিশ হাতিটি ফেরানোর উপায় খুঁজে না পেয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের সিদ্ধান্ত চায়। গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমনটিই বলা হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মতি পেয়েই একের পর এক গুলি ছুড়ে হাতিটি মারা হয়। পরে সেখানেই পুঁতে রাখারও ব্যবস্থা হয়। হাতি মারার পক্ষে যুক্তি- ফসল বিনষ্টের পাশাপাশি মানুষের প্রাণহানির শঙ্কা যেখানে, সেখানে একটি হাতি মারা হয়েছে তো কী হয়েছে? একটি হাতির চেয়ে একজন মানুষের জীবনের মূল্য অনেক বেশি। পক্ষান্তরে পরিবেশবাদীদের বক্তব্য একের পর এক বন্যপ্রাণী গুলি করে মারার চেয়ে মানুষের স্বার্থেই বিকল্প ব্যবস্থা পূর্ব থেকেই কি প্রস্তুত রাখা প্রয়োজন নয়?

গুলি করে হত্যার বিকল্প ব্যবস্থা থাকলে নিশ্চয় হাতি হত্যার মতো পদক্ষেপ নিতে হতো না। বিলুপ্ত প্রায় বলেই শুধু নয়, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে বন্যপ্রাণী হত্যার বিকল্প রাখা অবশ্যই জরুরি। ভারত থেকে আসা হাতিটি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে বিকল্প প্রস্তুতির কতোটা অভাব। যদিও গুলি করে বন্যপ্রাণী মারার উদাহরণ এটাই প্রথম নয়, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার এক গ্রামের একটি গাছের মগডালে বসে থাকা হনুমানকে কয়েক বছর আগে গুলি করে মারতে হয়। হনুমান যখন একের পর এক মানুষের ওপর আক্রমণ করতে শুরু করে তখন গুলি করে মারা ছাড়া বিকল্প ছিলো না। এ বিকল্প কেন রাখা হয় না, সেটাই বড় প্রশ্ন। সামর্থ্য? বাস্তবতার আলোকে এটাও যুক্তিযুক্ত প্রশ্ন বটে। সামর্থ্যের চেয়ে আমাদের ওদিকে বিশেষ নজর দেয়ার আন্তরিকতারই যে বড্ড অভাব তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না।

বন্যপ্রাণীর খেপাটে আচরণ থেকে মানুষের প্রাণহানির শঙ্কামুক্ত এবং ফসল রক্ষায় বিকল্পের জন্য কাড়ি কাড়ি টাকার তহবিল লাগে না। হত্যার জন্য যে বুলেট ব্যবহার করতে হয়েছে সেই বুলেটের চেয়ে ঘুমপাড়ানি গুলির দাম অনেক কম। ঘুমপাড়ানি কিছু গুলি আর ওই গুলি ছোড়ার দু একটি অস্ত্র প্রতিটি থানায় রাখলে বন্যপ্রাণী হত্যার দরকার পড়তো কি?