এরপরও বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় পুলিশ-ই যে ভরসা!

 

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় মোবাইলফোনে খুনের হুমকি দিয়ে আশঙ্কাজনকহারে চাঁদাবাজি বেড়েছে। হরেক নামের চরমপন্থি দলের আঞ্চলিক নেতা বলে পরিচয় দিয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। অনেকেই চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালেও একেবারেই যে কেউ আপসের পথে হাঁটছেন না তা নয়। কেউ কেউ অল্প কিছু দিয়ে নিজেকে নিরাপদ ভেবে বোকার মতো তৃপ্তির ঢেকুরও তুলছেন। আইনশৃঙ্খলার যে দশা তাতে ক্ষণিকের তৃপ্তদের বোকা-ই বা বলবেন কীভাবে? তাই বলে হাল ছাড়লে তো চলবে না।

নির্দিষ্ট কয়েকটি মোবাইলফোন নম্বর থেকে ব্যবসায়ী, চিকিৎসকসহ প্রায় সকল প্রকারের পেশাজীবীর নিকট মোবাইলফোনে ও টেলিফোনে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। চাঁদার টাকা দিয়ে ওরা ওদের পার্টি পরিচালনাসহ তাদের বন্দি সহকর্মীদের মুক্ত করার কথা বলছে। টাকা না দিলে পার্টিবিরোধী আখ্যা দিয়ে হামলা চালিয়ে খুন করা হবে বলেই শুধু হুমকি দিচ্ছে না, ওরা সন্তানসহ নিকটজনদের অপহরণ করারও হুমকি দিতে ছাড়ছে না। মোবাইলফোনে চাঁদাবাজচক্রের অপতৎপরতা বেশ কিছুদিন ধরে চললেও চাঁদাবাজচক্রের হোতাদের তেমন কাউকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী তথা পুলিশ ধরে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারছে না বা নিচ্ছে না।

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় চরমপন্থি নামে চাঁদাবাজি নতুন নয়, এক সময় অস্ত্রধারী চরমপন্থিদের রক্তের হোলিতে লাল হয়ে উঠেছিলো জনপদের মাটি। প্রায় প্রতিদিনই খুন, পাল্টা খুন লেগেই থাকতো। সেই জনপদের শুধু দুর্বল চিত্তের মানুষের কাছেই নয়, সাহসী মানুষের কাছেও চরমপন্থি দলের নেতা বলে পরিচয়ে ফোন বা সেলফোনে ঠাণ্ডা হুমকিসহ চাঁদা দাবি করলে বুকের কাঁপুনি অমূলক নয়। অবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। র‌্যাব-পুলিশের লাগাতার সন্ত্রাসবিরোধী অনমনীয় অভিযানে এলাকার বাঘা বাঘা অস্ত্রধারীর পতন হয়েছে। হ্রাস পেয়েছে অস্ত্রের ঝনঝনানি, রক্তের হোলি। বেড়েছে মোবাইফোনে চাঁদাবাজি। অথচ মোবাইলফোন ব্যবহারকারী ও তার অবস্থান প্রযুক্তির বদৌলতে শনাক্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া অসম্ভব নয়। প্রযুক্তি পুলিশেরই হাতে। এরপরও পুলিশের ব্যর্থতা কেন?

যে জনপদের মানুষ রক্তের হোলি দেখে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে টু শব্দটি পর্যন্ত করতে পারতো না, সেই জনপদের মানুষ সন্ত্রাসীদের ধরে পুলিশে দিয়েছে। গণপিটুনি আইনসিদ্ধ না হলেও অতিষ্ঠ জনগণ সে পথেও হেঁটে তাদের ক্ষোভের বহির্প্রকাশ ঘটিয়েছে। এর মধ্যেও ছিলো পুলিশকে পাশে পাওয়ার সাহস। সম্প্রতি সেই সাহসটুকুও যেনো এলাকার সাধারণ মানুষ আবার হারাতে বসেছে। পূর্বে গ্রামাঞ্চলেই ছিলো চাঁদাবাজচক্রের আধিপত্য। এখন অজ্ঞাত স্থান থেকে শহরের পেশাজীবী, ব্যবসায়ীদের নিকট চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। খুনের হুমকি দেয়া হচ্ছে। চাঁদার টাকা না দেয়া পর্যন্ত সন্ত্রস্ত করে তুলছে তারা। কেউ কেউ পুলিশকে জানালেও আশাহত হতে হচ্ছে তাদের। এরপরও বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় পুলিশ-ই যে ভরসা!

চাঁদাবাজচক্রের হুমকি-ধামকিতে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে নয়, সাহসিকতার সাথে রুখতে হবে। আর এ জন্য অবশ্যই পুলিশকে চাঁদাবাজচক্রের হোতাদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। পুলিশের অপ্রতুলতার পরও আমাদের সমাজের পুলিশ পারে। পারতে হয়। অবশ্য সব সময় পুলিশ পারে না। কখন পারে কখন পারে না তাও সমাজের সাধারণ মানুষের কাছে খুব একটা অজানা নয়। চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর জনপদে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অতোটা প্রতিকূল নয়, যতোটা প্রতিকূল হলে পুলিশের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হয়।