এতো কিছুর পরও পুলিশই ভরসা : কর্তারা দৃষ্টি দিন

মেহেরপুর জেলা সদরের হিজুলীর পর ডাকাতদলের বোমার আঘাতে নিহত হয়েছেন মেহেরপুর গাংনীর জুগিন্দা গ্রামের এক কৃষক। একের পর এক ডাকাত, ডাকাতদলের প্রতিরোধ করতে গিয়ে বোমা হামলার শিকার হয়ে একের পর এক প্রাণহানি এলকাবাসীকে কতোটা শঙ্কিত করেছে তা পুলিশের দায়িত্বশীল কর্তারা নিশ্চয় উপলব্ধি করছেন।

 

ডাকাতদল বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ডাকাতদলের সদস্যের তেমন কাউকেই ধরতে পারছে না পুলিশ। দিন দিন ডাকাতদলের সাহস বেড়ে যাচ্ছে। প্রতিরোধের ন্যূনতম সাহসটুকুও ধরে রাখতে পারছে না গ্রামবাসী। ডাকাতদলের বোমাঘাতে হিজুলীর প্রতিবাদী তরুণ কৃষকের দাফন কাজে শরিক হন এলাকার অসংখ্য মানুষ। ক্ষোভের আগুন আর শোকের ছায়ায় দাফনের রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও গাংনীর জুগিন্দায় অভিন্ন কৌশলে ডাকাতদল গ্রামবাসীর ওপর বোমা নিক্ষেপ করে একজনকে খুন করেছে। ডাকাতদল বোমা নিয়ে ভয়ঙ্কর দুঃসাহসী। নিরস্ত্র মানুষগুলোকে স্বস্তি দিতে পুলিশি তৎপরতা আরো জোরদার করা যে জরুরি তা বলাই বাহুল্য।

 

ডাকাতির আগেই যখন ডাকাতদলকে ধরে আইনে সোপর্দ করার কথা, তখন ডাকাতি করে প্রতিরোধের মুখে বোমা মেরে একের পর এক মানুষ খুন করেও ডাকাত ধরা পড়ছে না। এটা কি পুলিশের ব্যর্থতা নয়? অপরাধমূলক অপকর্ম করার আগেই অপরাধীদের ধরে আইনে সোপর্দ করার জন্য ফি বছর সরকার গোপন সংবাদদাতার অর্থের জোগান দেয়। ‘সোর্সমানি’ হিসেবে খ্যাত এ অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অমূলক নয়। সোর্সমানি খরচ করে সোর্সের মাধ্যমে অপরাধীদের অবস্থান বা গতিপ্রকৃতি জেনে তাদের ধরতে পুলিশের খুব বেশি বেগ পাওয়ার কথা নয়। তা হচ্ছে না। তা ছাড়া পুলিশি তৎপরতা জোরদার হলে, পুলিশ জনগণের আস্থা অর্জনের মতো কর্তব্যপরায়ণ হলে এলাকার সাধারণ মানুষও পুলিশের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। তাতে নিশ্চয় ঘাটতি, তা না হলে অপরাধীচক্রের অতোটা বাড়বাড়ন্ত কেন? গ্রামের সাধারণ মানুষ বোমা হামলার শিকার হয়ে ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে। দফায় দফায় ফুটে উঠছে অসহায়ত্ব। এরপরও পুলিশই জনগণের ভরসা, নিরাপদ আশ্রয়স্থল। হাল ছাড়লে তো হবে না। না পারার ব্যর্থতার কারণ খুঁজে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

দেশ জুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা। পুলিশকে রাজপথেই অধিক সময় কাটাতে হচ্ছে। গ্রাম-বাংলার আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার মতো লোকবল কম। পরিববহন ব্যবস্থাও অপ্রতুল। তা না হলে কি আর এমনি এমনিই ওই অবৈধযান নিয়েই পুলিশকে টহল দিতে বের হতে হয়? অপ্রতুলতা কাটিয়ে পুলিশের সক্ষমতা দেখতে চায় গ্রামবাসী। গণহারে ডাকাতি, প্রতিরোধের মুখে বোমা নিক্ষেপ করে নিরস্ত্র মানুষ খুন নীরবে মেনে নেয়া যায় না। গ্রামজুড়ে পাহারার ব্যবস্থাও স্থায়ী সমাধান নয়। অপরাধীদের অবস্থান শনাক্ত করে তাদের ধরে উপযুক্ত শাস্তির লক্ষ্যে আইনে সোপর্দ করতে না পারলে অবস্থা যে আরো ভয়াবহ হয়ে উঠবে তার পূর্বাভাস ইতোমধ্যেই ফুটে উঠেছে।

 

বোমার বারুদ প্রতিবেশী দেশ থেকে পাচার করে আনা হয়। বোমা তৈরির কারিগরও খুব বেশি নেই। প্রতিবেশী দেশ থেকে শুধু বোমা তৈরির বারুদই আসে না, সস্তা নিম্নমানের আগ্নেয়াস্ত্রও পাচার হয়ে আসে। ফলে সীমান্ত প্রহরীদের বাড়তি সতর্ক হতে হবে। জনগণের সহযোগিতা নিয়ে মাঠপর্যায়ে পুলিশকে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। এ জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তাদের আশু দৃষ্টি প্রয়োজন।