এখনই সতর্ক না হলে প্রজন্মকে মনের বাঘেই খুবলে খাবে 

কোনটা অসামাজিক? সমাজের জন্য যেটা ক্ষতিকর সেটা, নাকি সমাজ যেটা সহ্য করে না সেটা? যদি এ দুটোই হয় তারপরও কি কেউ কারো বিরুদ্ধে আপত্তিকর বা অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগ তুলে অর্থ হাতিয়ে নিতে পারে? কোনটি নৈতিক, কোনটি অনৈতিক বা অসামাজিক তা দেখার দায়িত্বই বা চুয়াডাঙ্গার উঠতি বয়সী ওই যুবকদের কে দিয়েছে? অর্থলিপ্সুতা ওদের শুধু উশৃঙ্খলই করেনি, পুলিশি নিরবতা ওদের অপরাধবোধ উপলব্ধির বিবেকটাও ভোতা করে দিচ্ছে। সংক্রমিত হচ্ছে অভিন্ন অপরাধ প্রবণতা। ছড়াচ্ছে আতঙ্ক। ঘুরে ফিরে পেয়ে বসছে ভয়। গড়ে উঠছে শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ।  নিজের সন্তানকে যেমন কড়া শাসনে রেখে সুপথে রাখা যায় না, তেমনই যুবক-যুবতীর সহজাতপ্রবৃত্তির প্রভাবকে অস্বীকার করে তাদের সাফল্য আশা করা যায় না। তাহলে বয়ঃসন্ধিকালে ওদের সহজাতপ্রবৃত্তির স্বভাবসুলভ স্বাভাবিক মেলামেশাতেও আপত্তি কেন? পথের পাশে একটু ঘেঁষে বসে কথা বলাতে আপত্তি তোলার আগে অবশ্যই তাদের মুক্তমনে বোঝা-বুঝি তথা কথা বলার পরিবেশ দেয়া উচিত। না, চুয়াডাঙ্গায় তেমন চিত্তবিনোদনের স্থান নেই, যেমনটি থাকলে যেখানে সেখানে বসতে হতো না। তারপর যদি অর্থ আদায়ের জন্য জুটি খুঁজে পেলেই দলবদ্ধ যুবকদের উশৃঙ্খল আচরণের শিকার হতে হয়, কখনো কখনো আরও বেশি কিছুর শিকার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে তখন সেই সমাজকে কি সভ্য সমাজ বলা চলে?  গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দুটি ঘটনার বর্ণনাসহ চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের সড়ক, শহরতলির পথ-ঘাটের বা আনাচে-কানাচের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা প্রশাসনের অবশ্যই খতিয়ে দেখা দরকার। সচেতন সমাজের সকলেই সুস্বাস্থ্য কামনা করেন। সুস্থ থাকার অন্যতম উপায় প্রাতঃভ্রমণ। চিত্তবিনোদনও অতিবগুরুত্বপূর্ণ। ডিবি পুলিশ সেজে প্রাতঃভ্রমণরতার গলার চেন ছিনিয়ে নেয়া, অটোতে ভ্রমণরত উঠতি বয়সী যুবক-যুবতীকে ধরে ‘অতো ঘেঁষে বসে কেন’ প্রশ্ন তুলে অর্থ আদায়কারীরা করা? অসামাজিক কাজে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ তুলে পুলিশে দেয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা নেয়া এবং কখনও কখনও পুলিশে দেয় যারা তারা নিশ্চয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসমূহের অচেনা নয়।  সন্তানকে কড়া শাসনের বদলে তার মধ্যে স্বপ্নের বীজবপনসহ প্রয়োজনীয় পরিচর্যাই যেমন সঠিক অভিভাবত্ব, তেমনই সমাজকে সুন্দর পথে নিতে প্রাণিকূলের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ গড়ে তোলাই সুন্দর সমাজ গঠনের আদর্শ বা দূরদর্শী নির্দেশক। তাতে ঘাটতি বলেই অগ্রযাত্রার পথে এখনও এতো প্রতিবন্ধকতা। বুঝে না বুঝে সমাজের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে যারা তুচ্ছ স্বার্থে অন্ধ ওদের ধরে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার। দরকার সচেতনতার আলো ছড়ানোর পাশাপাশি বিনোদনের মুক্ত পরিবেশ। অন্যথায় প্রজন্মকে বনের বাঘে নয়, মনের বাঘেই খুবলে খাবে। জাতি ভুগবে চরম হীনমন্যতায়।