একের পর এক হত্যা নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করছে

দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিরাট হুমকির মুখে। এক বিশেষ কায়দার ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডকে গুরুত্বের সাথে না নিয়ে কখনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উল্লেখ, কখনও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে বলে প্রবোধ দেয়ার কথাবার্তা বলা হয়েছে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির মধ্যে প্রতিটি খারাপ ঘটনায় পরস্পরকে দোষারোপ করে তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক ফায়দা লোটার যে মানসিকতা, তার আড়ালে প্রকৃত অপরাধী, সন্ত্রাসী ও চক্রান্তকারীরা নিজেদের রক্ষা করে চলেছে, শক্তি বাড়িয়ে চলেছে। পুলিশ যদি খুনিদের ধরতে পারতো তাহলেই এই দানবীয় অপরাধের অবসান ঘটানোর দিকে অগ্রগতি হতো। কিন্তু পুলিশের তদন্ত ও গোয়েন্দা-ব্যর্থতা রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ঝিনাইদহে সনাতন ধর্মাবলম্বী বৃদ্ধ এক পুরোহিতকে গলা কেটে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। ইসলামী জঙ্গি বাহিনী আইএস তার হত্যার দায় স্বীকার করেছে। এর আগে রোববার হরিণাকুণ্ডুর ক্লিনিক ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামকে গুলি ও গলা কেটে খুন করা করেছে দুর্বৃত্তরা। তার বাড়ি আলমডাঙ্গার তিয়রবিলা গ্রামে। একই দিন হরিণাকুণ্ডু দরিয়ারপুর গ্রামের ভাগ্নের হাতে মামা খুন হয়েছে।

রোববার ৫ জুন চট্টগ্রামে নিষ্ঠাবান পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম প্রকাশ্য রাজপথে সকালবেলায় নৃশংসভাবে নিহত হওয়ায় সারাদেশে কাঁপুনিজ্বরের মতো প্রতিক্রিয়া হয়েছে। তিনি শিশুপুত্রকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেলে তিন ঘাতক এসে ছুরিকাঘাত ও মাথায় পিস্তলের গুলি চালিয়ে হত্যা করে। এই হত্যা ঘাতকদের প্রতিহিংসা চরিতার্থ বলেই মনে হয়। বাবুল আক্তার সাহসী পুলিশ অফিসার হিসেবে ধর্মান্ধ জঙ্গি নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবি সংগঠনের গোপন ঘাঁটিতে হানা, অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসী গ্রেফতার, একাধিক হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন, ইয়াবা মাদক চোরাচালানিদের বিরুদ্ধে অভিযান প্রভৃতির জন্য প্রশংসিত ও জনপ্রিয়। তিনি ও তার পরিবার সন্ত্রাসীদের প্রতিশোধ গ্রহণের হুমকিও পেয়েছিলেন। শিশুপুত্রের সামনে একজন নিরপরাধ মাকে হত্যা করা যে কতো কাপুরুষোচিত ও বর্বর কাজ তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এই হত্যাকাণ্ডকেও ধর্মান্ধ জঙ্গিদের একই কায়দার হত্যা বলে স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

একই দিনে নাটোরে গরিব খ্রিস্টান মুদিদোকানি সুনীল গোমেজকে দুর্বৃত্তরা গলা কেটে খুন করে। মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামী জঙ্গি বাহিনী আইএস তার হত্যার দায় স্বীকার করেছে। বাংলাদেশে একই ধরনের একাধিক হত্যায় এমন দায় স্বীকারের তথ্য এলে সরকার তা নাকচ করে। বাবুল আক্তারের হত্যার দায় স্বীকার আইএস সাথে সাথে করেনি। ঘাতকরা চাপাতি নয়, ছুরি ও পিস্তল ব্যবহার করেছে। এই ঘাতকরা জঙ্গি নাকি জামায়াত নাকি মাদকব্যবসায়ী তা পুলিশকে প্রমাণসহ উদঘাটন করতে হবে। খুনি ধরতে না পারলে আগাম মন্তব্য কাজ দেবে না। দেশের সব গণতান্ত্রিক-রাজনৈতিক শক্তি ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে ধর্মান্ধ জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সমন্বিত জোরালো অভিযানের সময় এসেছে। এই দায়িত্ব সরকারের।