উল্টো পরিবেশ পাল্টে পঠন-পাঠনে চুয়াডাঙ্গা হোক দৃষ্টান্ত

কিছু শিক্ষার্থী আছে যাদের খেলার সুযোগ দেয়া হয় তখন সে বিশ্বজয়ের স্বস্তি নিয়ে রোদের মধ্যেও নামে মাঠে। আর তাদেরই যখন ছায়ায় বৈদ্যুতিক পাখার নিচে বসে পড়তে বলা হয় তখন? রাজ্যের কষ্টের ছাপ ফুটে ওঠে মুখোবয়বে। কেন? কারণ খেলাটা সে ওরা যতোটা উপভোগ্য করতে পেরেছে লেখাপড়াটা ততোটা নয় বলেই। এ হিসেবে লেখাপড়ায় শিক্ষার্থীদের মনোনিবেশের মূলমন্ত্র উপভোগ্য করে তোলা। কোনো শিক্ষক পারেন কোনো শিক্ষক পারেন না। কোন শিক্ষক পারেন, কোন শিক্ষক পারেন না তা বিদ্যালয়ে পাঠদানের ধরন দেখলে অনুমান করা নিশ্চয় কঠিন নয়। বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট, পাঠদানে অনীহা একদিনে আসেনি। দায়িত্বশীলদের দীর্ঘদিনের উদাসীনতার কারণেই প্রত্যাশিত শিক্ষার পরিবেশ পাল্টে উল্টোটাই আসন গেড়েছে।

বিদ্যালয়ের বেতনভুক্ত শিক্ষক হয়েও তিনি যখন প্রাইভেট পড়ান কিংবা কোচিঙের সাথে যুক্ত তখন কোথায় তিনি কতোটা শিক্ষকসূলভ তা অনুমান করতে কারো কষ্ট হওয়ার কথা নয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক বিষয়টি উপলব্ধি করেই বিদ্যালয়ের শিক্ষকম-লিকে কোচিং বাণ্যিজের সাথে সংশ্লিষ্টতা দূরাস্ত নিজ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও প্রাইভেট পড়ানো কঠোরহস্তে বন্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। বিদ্যালয় চলাকালে কোনো প্রকারের কোচিংই চলবে না বলেও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে চলে আসা কিছু শিক্ষাদানকেন্দ্রও তাদের কর্মকা- সীমিত করেছে। এর ভালো-মন্দ বা পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি থাকা অমূলক নয়। তর্কই তো সঠিকপথ দেখানোর আলোকবর্তিকা। তাহলে তর্কের খাতিরেই কিছু প্রশ্ন সামনে আনা যাক। চুয়াডাঙ্গা জেলার শিক্ষার মান দিন দিন ঊর্ধ্বমুখী নাকি বিপরীতে? পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল ও দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির যোগ্যতা অর্জনের স্পষ্ট পরিসংখ্যান না থাকলেও বিতর্ক আছে। যদিও ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় চুয়াডাঙ্গার সাফল্য এক যুগ ধরে অন্য জেলার কাছে ঈর্ষণীয়। মেডিকেল, বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তির যোগ্যতা অর্জনের সংখ্যা ইতিবাচক হারেই  বেড়েছে। এ বৃদ্ধির আড়ালে অবশ্যই অভিভাবকদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সন্তানদের প্রতি যেমন দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হওয়া তেমনই কোথায় গেলে শিক্ষা পাবে তা খুঁজে নিয়ে সেখানে পড়তে দেয়া। অভিভাবকেরা ছেলে-মেয়েদের ভালো ফলের জন্য উল্টো সোজা বোঝার বদলে বিনিয়োগেই হয়ে উঠেছেন আগ্রহী। সেই ধারায় এবার কিছুটা হলেও পড়েছে ছেদ। ফলে বিদ্যালয়ে পরিপূর্ণ শিক্ষাদানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে না পারলে সময়ের অপচয় শিক্ষার্থীদের কোন দিকে নেবে তা পুনঃপুনঃ ভেবে দেখা জরুরি।

কোচিং বা প্রাইভেট টিউশনি পিছিয়ে পড়াদের এগিয়ে নিতে সহায়ক হলেও গরিব ধনীর ছেলেদের লেখাপড়া গ্রহণে বৈষম্য নেমে আসে। এই বৈষম্য তখনই দূর হবে যখন বিদ্যালয়ে পঠন-পাঠনের পূর্ণ পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। চুয়াডাঙ্গা সরকারি দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সেই পূর্ণ পরিবেশ বহুদিন ধরেই অনুপস্থিত। কারণ শিক্ষক স্বল্পতার পাশাপাশি বিগত দিনে জবাবদিহিতায় কিছুটা হলেও ঘাটতি ছিলো। বর্তমান জেলা প্রশাসক নিশ্চয় এ বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। শুধু এ দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় দিয়ে নয়, সকল প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের সকল স্বল্পতা, সকল অপ্রতুলতা কাটিয়ে তুলতে হবে। শিক্ষকম-লির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদানে আন্তরিক করার বিশেষ উদ্যোগ চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার মান অনুকরণীয় হয়ে উঠবে।