উপজেলা নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দ্বিতীয় পর্ব আজ

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আজ দ্বিতীয়পর্বের ভোট গ্রহণ হবে। এ দফায় নির্বাচন হবে ৫২টি জেলার ১১৭টি উপজেলায়। ১৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রথম পর্বের নির্বাচনে ৪০টি জেলার ৯৭টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ হয়েছিলো। অর্থাৎ দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনের পরিধি প্রথম দফার চেয়ে বেশি। সেক্ষেত্রে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বও বেশি। উল্লেখ্য, এবার সারাদেশে ৪৮০টির বেশি উপজেলায় ছয় দফায় ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বর্তমান উপজেলা পরিষদগুলোর মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখে ভিন্নতা থাকায় নেয়া হয়েছে এ সিদ্ধান্ত। উপজেলা পরিষদের প্রথম পর্বের নির্বাচন কয়েকটি স্থানে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ এবং কিছু ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের ঘটনা ছাড়া উৎসবমুখর পরিবেশেই সম্পন্ন হয়েছে। তবে নির্বাচনের ফলাফল বিএনপির অনুকূলে যাওয়া সত্ত্বেও কারচুপি, কেন্দ্র দখল ও জালভোটের অভিযোগ করেছে দলটি।

বস্তুত প্রথম পর্বে ১৬টি উপজেলার ৬৫ কেন্দ্রে অনিয়মের খবর পাওয়া গেছে। ভোট জালিয়াতিতে একজন পুলিশ কর্মকর্তারও জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। এসব অনিয়মের প্রতিবাদে বিএনপি আটটি উপজেলায় হরতাল কর্মসূচিও পালন করে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, কোথাও কোথাও পুকুরে ব্যালট পেপার ভাসছে। প্রকাশিত হয়েছে ভাঙা ব্যালট বাক্সের ছবিও। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে জালভোট প্রদানের অপরাধে প্রার্থী ও এজেন্টসহ সাতজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সবকিছু মিলিয়ে বলা চলে, প্রথম পর্বের নির্বাচনে মানুষ সাড়া দিয়েছে সত্য, তবে নির্বাচন পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ হয়নি। প্রথমপর্বের ব্যর্থতাগুলো খতিয়ে দেখে দ্বিতীয়পর্বের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা নিতে হবে ইসিকে। উপজেলা নির্বাচন দলীয় ব্যানারে অনুষ্ঠিত না হলেও কার্যত এ নির্বাচন হয়ে থাকে দলীয় ভিত্তিতেই।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিগত সংসদের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি অংশ না নিলেও উপজেলা নির্বাচনে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছে। দু প্রধান দলের প্রার্থীরা অংশ নেয়ায় স্বভাবতই নির্বাচন খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি ভুল করেছে নাকি ঠিক করেছে অথবা বিএনপিকে ওই নির্বাচনে আনতে ক্ষমতাসীন দল কতোটা আন্তরিক ছিলো- এসব বিতর্কে না গিয়েও বলা যায়, উপজেলা নির্বাচনে মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে তারা অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন চায়।

উপজেলা স্থানীয় সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তর। বর্তমানে প্রায় সব রাজনৈতিক দল উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ায় প্রতীয়মান হয়, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় উপজেলা পরিষদের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব তারা উপলব্ধি করেন। তবে আমরা মনে করি, উপজেলা পরিষদকে সত্যিকার কার্যকর করতে শুধু নির্বাচন অনুষ্ঠানই যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করা প্রয়োজন। উপজেলা পরিষদের দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, যোগাযোগ ও ভৌতকাঠামো উন্নয়ন, কৃষি-মৎস্য-প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন, প্রাথমিক-মাধ্যমিক-মাদরাসা-গণশিক্ষার উন্নয়ন, বাজার মূল্য পর্যবেক্ষণ, মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থ, বাজেট, পরিকল্পনা ও স্থানীয় সম্পদ আহরণ ইত্যাদি। উপজেলা পরিষদগুলো অতীতে এসব দায়িত্ব সফলভাবে পালনে ব্যর্থ হয়েছে। এ ব্যর্থতার জন্য দায়ী করা হয় পরিষদের কাজে স্থানীয় সংসদ সদস্যের হস্তক্ষেপ এবং চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মধ্যকার দ্বন্দ্বকে। উপজেলা পরিষদকে কার্যকর করতে হলে সংবিধান অনুযায়ী যার যার ক্ষমতা সুনির্দিষ্ট করে দিয়ে এ দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাতে হবে। মনে রাখতে হবে, উপজেলা পরিষদকে যথাযথ কার্যকর করতে প্রয়োজন পরিষদের পূর্ণ ক্ষমতায়ন, যাতে পরিষদ নিজের কার্যপদ্ধতি নিজেই নির্ধারণ করতে পারে। পরিষদের দায়িত্বের আওতাধীন যেকোনো কাজের সিদ্ধান্ত পরিষদ নিজে নিতে পারে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনে উপজেলা পরিষদ আইন সংশোধন করতে হবে। চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্বের ভোটগ্রহণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে- এটাই প্রত্যাশা।