উন্নয়ন তালিকার অগ্রভাগে অগ্রাধিকার পাক পিছিয়ে থাকা জেলা

 

১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের উদ্বোধন করা হয়েছে। উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশকে উন্নয়নের পথে নেয়ার এটা আরেকটি মাইলফলক বটে। সুষম উন্নয়ন, শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির বিশেষ উদ্যোগ সাধুবাদ পাবার দাবি রাখে।

প্রধানমন্ত্রী অনেক আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন উন্নয়ন বৈষম্য দূর করতে তার সরকার সব জেলায় একটি করে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলবে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৯টির প্রাথমিক অনুমোদন দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনকৃত ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে ৪টি সরকারি ও ৬টি বেসরকারি। সরকারি উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো হলো চট্টগ্রামের মিরেরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, মৌলভীবাজারের শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল, বাগেরহাটের মংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং টেকনাফের সাবরাং পর্যটন অঞ্চল। বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে নরসিংদীর পলাশে, মুন্সীগঞ্জে, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ২টি, গাজীপুরে ও নারায়ণগঞ্জে। এগুলোর উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় থাকবে যথাক্রমে একে খান গ্রুপ, আবদুল মোনেম লিমিটেড, মেঘনা গ্রুপ, বে গ্রুপ ও আমান গ্রুপ। জানা গেছে, এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য সরকার জায়গার ব্যবস্থা করেছে। এদের উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন হবে উদ্যোক্তাদের অর্থায়নে। পর্যায়ক্রমে ইতোমধ্যে অনুমোদিত এবং পরবর্তীতে অনুমোদিত অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো গড়ে তোলা হবে। ২০৩০ সালের ডেডলাইন অনুযায়ী ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার কাজ সম্পন্ন হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের জীবনমানের উন্নয়নে এটি একটি বিশাল পরিকল্পনা ও উদ্যোগ। উদ্যোগের শুভসূচনায় চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর অন্তর্ভুক্ত হলে অবহেলিত থাকার কষ্ট ঘুঁচতো, অভিমত অনেকের। তাদের অভিমত, যখনই জেলা ভিত্তিক উন্নয়ন তালিকা প্রস্তুত প্রণয়ন করা হয়, তখনই তালিকার শেষের দিকে পড়ে এ দুই জেলা। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের উদ্বোধনীতে এ দুটি জেলা অন্তর্ভুক্ত না হলেও দ্বিতীয় দফায় অন্তর্ভুক্ত হবে বলেই বিশ্বাস।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মতে, ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে রফতানি আয় হবে ৪ হাজার কোটি ডলার আর কর্মসংস্থান হবে অন্তত এক কোটি লোকের। বাংলাদেশ এখনো মূলত কৃষি অর্থনীতির দেশ। যদিও চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলকে কৃষি উন্নয়নে বিশেষ কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শুধু কৃষি অর্থনীতির ওপর নির্ভর করে কোনো দেশেরই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির জাতীয় প্রত্যাশা পূরণ হতে পারে না। কৃষি অর্থনীতির পাশাপাশি শক্তিশালী শিল্প-অর্থনীতিও গড়ে তোলা জরুরি। সরকার প্রতি জেলায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার যে পরিকল্পনা-উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিয়েছে তার বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে সুষমতা যেমন আসবে, তেমনি এখনকার মতো অনেক সমস্যাই আর তখন থাকবে না। উন্নয়ন, শিল্পায়ন, রফতানি, কর্মসংস্থান ইত্যাদির ক্ষেত্রে একটা ভারসাম্য তৈরি হবে। ভালো পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেয়াই বড় কথা নয়, সেই পরিকল্পনা ও উদ্যোগ যথাসময়ে সুচারু ও মানসম্পন্নভাবে বাস্তবায়নের মধ্যেই প্রকৃত সাফল্য লুকায়িত।

সন্দেহ নেই, অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকে কেন্দ্র করে শহর গড়ে উঠবে। সে সব শহরকেও পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে হবে। উন্নয়ন তালিকায় পিছিয়ে পড়া জেলাগুলোকে এগিয়ে নিতে তালিকার অগ্রভাগে রাখার বিষয়টি বিবেচনা করা দরকার।