উন্নয়নে অবশ্যই অনিয়মই বড় অন্তরায়

 

কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখেছে, রাখছে। এলাকার কৃষকদের অন্যতম অর্থকরি ফসলের তালিকায় রয়েছে আখ। অর্থনৈতিকভাবে লাভবান না হলে কৃষক আখচাষ করবেন কেন? কেরুজ চিনিকল আওতাভুক্ত এলাকায় কৃষক আখচাষ করে তা নিজ উদ্যোগে মাড়াই করে গুড় বা লাল চিনি উৎপাদনের এখতিয়ার রাখে না। আখ চিনিকলের ক্রয়কেন্দ্রে বিক্রি করতে হয়, আর সেই কেন্দ্রে যদি ওজনে কারচুপির মাধ্যমে কৃষকের আখচুরি চলে দেদারছে তা হলে ক্ষোভসঞ্চার হওয়া স্বাভাবিক। চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার মাজহাদ ক্রয়কেন্দ্রের ওজনযন্ত্রের কারচুপি হাতেনাতে ধরার পর ক্ষুব্ধ আখচাষিরা যে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, তা দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভেরই বহির্প্রকাশ।

কেরুজ চিনিকলে চিনি উৎপাদনের মূল কাঁচামাল আখ। আখমাড়াই করেই চিনি উৎপাদন করে। আখ থেকে চিনি আহরণের পর অবশিষ্টাংশ ও বর্জ দিয়ে অন্যান্য মালামাল উৎপাদিত হয়। চিনি উৎপাদনে লোকসানের মাত্রা বাড়লেও কেরুজ চিনিকলের ডিস্টিলারি বিভাগের অর্জিত লাভ মোট লোকসানের বোঝাকে বহুলাংশে হালকা করে। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে আয়-ব্যয়ের হিসাবচিত্র আশার আলো না জাগালেও মিলটি রক্ষার জন্য কিছুটা হলেও সহায়ক হয়েছে। পুরোপুরি অনিয়ম দুর্নীতি দূর করার পাশাপাশি মিলটি পূর্ণাঙ্গভাবে আধুনিকায়ন করতে পারলে লোকসানের বদলে লাভের অঙ্কটা বাড়বে। মূলত সে কারণেই সরকার বিএমারি করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে। নতুন করে নিয়োগের তোড়জোড়ও চলছে। এরই মাঝে আখ ক্রয়কেন্দ্রে ওজনে কৃষক ঠকানোর বিষয়টি হাতেনাতে ধরা পড়েছে। এটাকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখা উচিত হবে না। মিলটি রক্ষার অন্যতম শর্ত তার কাঁচামালের জোগানদাতাদের খুশি রাখা। আখের জোগানদাতারা ইক্ষুচাষে আগ্রহ হারালে মিলটির পেছনে শ শ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও কোনো কাজই হবে না। মিলটির নিজস্ব জমিতে আখের আবাদ? তাতেও যে দশা, তা দেখে বিশ্বাস করার কারণ নেই যে, নিজেরা আবাদ করে মিলটি চালু রাখা সম্ভব হবে।

উন্নয়নে অবশ্যই অনিয়মই বড় অন্তরায়। অনিয়ম দুর্নীতি দূর করতে না পারলে মিলটির দশা আরো করুণ হতে বাধ্য। সে আখ ক্রয়কেন্দ্রেই হোক, আর কারখানাতেই হোক। অনিয়ম দুর্নীতি দূর করতে হলে প্রশাসনিক কাঠামো ও নিয়মনীতি যথাযথভাবে অনুসরন অপরিহার্য। অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে গড়িমশি এবং তাতেও অনিয়মের আশ্রয় অনিয়ম দুর্নীতি মানসিকতাকে উসকে দেয়। ওজনে কারচুপির অভিযোগ নতুন নয়। প্রতিটি অভিযোগেরই যথাযথ তদন্ত এবং উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে মিলটি রক্ষা পাবে। মিলটি থাকলে এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহতই শুধু থাকবে না, মিলটিই যাদের কর্মস্থল তাদের জীবন-জীবীকাও নিশ্চয়তার মধ্যেই থাকবে। অন্যথায় পরিণতি হবে আদমজী।