ঈদ মোবারক ঈদ মোবারক ঈদ মোবারক আস্-সালাম

বছর ঘুরে আবারও এসেছে খুশির ঈদ। উৎসবের আমেজ আকাশে বাতাসে। আজ শাওয়ালের চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল ঈদ। দীর্ঘ এক মাস সংযম সাধনার মাধ্যমে আল্লাহ-ভীতি বা তাকওয়া অর্জন ও আত্মশুদ্ধির যে তাগিদ অনুভব করেন মুসলিম জাহানের ঈমানদারগণ, ঈদুল ফিতর তার পূর্ণতার সুসংবাদ। ইসলামী দৃষ্টিতে ঈদ ওয়াজিব। কিন্তু মুসলিম উম্মাহর শ্রেষ্ঠ উৎব ঈদ বৈশিষ্ট্যে ও তাৎপর্যে অনন্যসাধারণ।
পশ্চিম আকাশে শাওয়ালের চাঁদের উদ্ভাস তাই মুসলিম জাহানের ঘরে-ঘরে নিয়ে আসে উৎসবের বারতা। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর ঘোষণা অনুযায়ী এদিন রোজাদারগণ মাসুম শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে যান। একজন সিয়াম সাধকের কাছে তিনটি মুহূর্ত অতীব গুরুত্বপূর্ণ, তাহলো ইফতার, ঈদুল ফিতর ও মহান আল্লাহ তায়ালার দিদার লাভের সময়। রমজানে মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর ঈদের আনন্দ ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের জন্য। পবিত্র এই দিনটি সামাজিক মিলনের জন্য নির্ধারিত হওয়ায় এই দিনে উপবাস ব্রত হারাম বা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইয়ামে জাহিলিয়াত বা ইসলাম-পূর্ব অজ্ঞানতার অন্ধকার যুগে আরবে নানা প্রকার উৎসব জনপ্রিয় ছিলো। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করে দেখতে পান, ওই জাতীয় উৎসবে আবালবৃদ্ধবনিতা নানা ধরনের স্থূল ও অর্থহীন ক্রীড়া ও উৎসবে মেতে ওঠেছে। মহানবী (স.) তখন থেকে তাদের উদ্দেশ্যহীন আনন্দ-উৎসবের সেই প্রাচীন ধারার পরিবর্তে মুসলিম জাতির জন্য আত্মশুদ্ধির পবিত্র স্পর্শময় ও কল্যাণে পরিপূর্ণ বছরে দুটি ঈদ উৎসব প্রবর্তন করেন। এর মধ্যদিয়ে রচিত হয় সামাজিক সম্প্রীতি ও বন্ধনের এক প্রীতিস্নিগ্ধ সোপান। নবী (স.) বলেছেন, লিকুল্লি ক্কওমিন ঈদ, হা-যা ঈদুনা। অর্থাৎ প্রত্যেক জাতির বার্ষিক আনন্দ-ফুর্তির দিন আছে। ঈদের দিনটি হলো আমাদের জন্য সেই উৎসবের দিন। এভাবে হিজরি দ্বিতীয় বর্ষে ঈদের শুভ প্রচলন শুরু হয়।
ঈদ আনন্দ উদযাপনের পাশাপাশি মানবজাতির মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সৌহার্দ্য-ভ্রাতৃত্ব বোধ, সামাজিক সম্প্রীতি, সাম্যচেতনা ও মহামিলনের বার্তা নিয়ে আসে। এদিনে মসজিদ-ঈদগায় ঈদের নামাজে লাখ লাখ মুসলিমের সমাগম ঘটে। সকলে কাতারবন্দী হয়ে সালাত আদায় করেন। সালাম সমাপন শেষে একে অপরকে বুকে জড়িয়ে নেন। কে ধনী, কে নির্ধন, কে পরিচিত, কে অপরিচিত- এর বাছবিচার গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। ভেদাভেদ, মনোমালিন্য, ঈর্ষা-বিদ্বেষ ও সংকীর্ণ হীন স্বার্থের গ্লানি মুক্ত হয় ইসলাম ধর্মালম্বীদের মন। এটাই ঈদের শাশ্বত কল্যাণ দর্শন। জাকাত দেয়ার যে চেতনা ও মর্মবাণী, তাও সেবাধর্মেরই মর্মবাণী। ইসলামে জাকাত দানের বাধ্যবাধকতা উন্মুক্ত করে দেয় দারিদ্র্য জয়ের পথ। মানবিক এই দায়িত্বভারের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেই বছরান্তে ঘুরে ঈদুল ফিতর। লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা, ঝগড়া-বিবাদ ও সকল প্রকার অন্যায় অপকর্ম থেকে বিরত থেকে পরম আত্মিক আনন্দ অর্জন করার মধ্যেই ঈদের শিক্ষা লুকিয়ে থাকে। এবারও পবিত্র রমজানের শেষপ্রান্তে ঈদের আনন্দ আপনজনদের সাথে ভাগাভাগি করতে আপন ঠিকানায় ফেরার পথে শত দুর্ভোগ পোয়াতে হয়েছে। রংপুরে ভয়াবহ ট্রাক দুর্ঘটনায় ১৭ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো অনেকে। এছাড়াও বহু স্থানেই ঘটেছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। প্রাণহানির সংখ্যাও কম নয়। ঈদের আগে দুর্ঘটনায় এ হতাহত আমাদের শোকার্ত করে সড়ক দুর্ঘটনামুক্ত করার তাগিদ দিয়েছে।
অবশ্যই মুমিনদের কাছে রমজান ও ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব যেমন, তেমনই বাকি এগারো মাস তথা প্রতিটি দিন-রাত ও মুহূর্তই মানবিকতার সুমহান আদর্শে উজ্জ্বীবিত। আমাদের প্রত্যেকের অন্তর এই মহান চেতনা জাগ্রত রাখতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সহায় হোন। মুসলিম জাহানে সবচেয়ে বড় খুশির এই পবিত্র দিনটি সকলের জন্যই আনন্দদায়ক হোক। নিরাপদ হোক। সকলকে শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।