ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে হবে

ঈদ এলেই পৈতৃক বাড়িঘরে গিয়ে আত্মীয়-স্বজনের সাথে ঈদ করতে চাওয়া মানুষের দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। ঈদের আগে বাস-ট্রেন-লঞ্চের টিকিট পাওয়া যাবে কি-না, পেলেও নিরাপদে-নির্ঝঞ্ঝাটে বাড়িঘরে পৌঁছানো যাবে কি-না, এ অনিবার্য দুশ্চিন্তা তাদের তাড়িত করে। ঈদ উপলে ঘুরমুখো মানুষের অপরিসীম দুর্ভোগ-বিড়ম্বনার অতীত অভিজ্ঞতা বিস্মৃত হওয়ার নয়। চলতি মাসের ১৩ তারিখে ঈদুল আজহা। ইতোমধ্যেই খবর পাওয়া যাচ্ছে, কোথাও টিকিট নেই, হয় আগেই তা বিক্রি হয়ে গেছে অথবা কালোবাজারিদের হাতে চলে গেছে। এখন অনেককেই বাড়তি অর্থ গুনে টিকিট সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এরপর ঘরে ফেরার পালা। সেই পালাটি কেমন হবে, সেটাই প্রশ্ন। তবে আলামত সুবিধাজনক বলে মনে হচ্ছে না। কারো অজানা নেই, আমাদের দেশে সড়ক পথই প্রধান। সড়ক পথেই অধিকাংশ মানুষ যাতায়াত করে; অধিক মালামাল পরিবাহিত হয়। আর সড়ক-মহাসড়কে যানজট প্রায় নিত্যদিনের বাস্তবতা। যাতায়াত মসৃণ ও দ্রুত করার জন্য, যানজট দূর করার জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অংশ বিশেষ আট লেনেও উন্নীত করা হয়েছে। এর কোনো সুফল লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সবচেয়ে প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক। এ মহাসড়কে প্রায় প্রতিদিনই যানজট লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত শুক্রবারের সৃষ্ট যানজটের যে খবর পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, তাতে স্পষ্টই প্রতীয়মান হয়, সড়ক নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা বলতে যা বুঝায় তার মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, মেঘনা ও গোমতি সেতুর দুই পাড়ে প্রায় ১৮ কিলোমিটারে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হয়। শ শ যানবাহন দু পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

অপরদিকে ঢাকা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহে ও চুয়াডাঙ্গার সড়কে একই অবস্থা। দৌলতদিয়া পাটুরিয়া ফেরিঘাটের অবস্থা তথইবচ। ফেরিঘাটেই কেটে যাচ্ছে ৬ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত। তারপর ফেরি পার হলেই ভয়ঙ্কর রাস্তা। কোথাও বড় বড় গর্ত, কোথাও দীর্ঘ ক্ষত-বিক্ষত, আবার কোথাও পানি কাদার জমাট। ফলে ঝুঁকি নিয়েই চলতে হচ্ছে সকরকে। এতে ঈদ আনন্দে যাত্রা হচ্ছে নিরানন্দ বিড়ম্বনার সংবাদপত্রের এ বাস্তবচিত্র। সঙ্গতকারণেই ঈদ উপলে যারা বাড়িঘরে যেতে চায়, তারা বিচলিত। পরিস্থিতির আশু কোনো পরিবর্তন না ঘটলে অবধারিতভাবে তাদের চরম দুর্ভোগ-বিড়ম্বনায় পড়তে হবে। সড়ক ও সেতুমন্ত্রী আগাম ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন এবং এখনো বলে যাচ্ছেন, এবারের ঈদে মহাসড়কে কোনো যানজট হবে না। তার এ ঘোষণার বিপরীতচিত্রে ক্ষুব্ধ হচ্ছে মানুষ। তার ব্যাপারে একটা বড় অভিযোগ হচ্ছে, তিনি বেশি কথা বলেন। কথা বলার ক্ষেত্রে তার সহকর্মীদের মধ্যে তিনি চ্যাম্পিয়ন। তবে তার কথায় আছর হয় কম, কাজ হয় আরও কম। মানুষ তার ঘোষণা ও বক্তৃতা শুনতে রাজি নয়, কাজ দেখতে চায়। সড়ক ও সেতু দেখভাল এবং যান ও যাত্রী চলাচল নির্বিঘ্ন করার গুরু দায়িত্ব তার ওপর অর্পিত। কথায় নয়, কাজের মাধ্যমে তার দায়িত্বশীলতার প্রমাণ দিতে হবে। সড়ক-মহাসড়কে চলার উপযোগী করে মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ঝুঁকিপূর্ণ ও আনন্দময় করতে হবে। মানুষের মতো আমরা কথা শুনতে নয়, কাজ দেখতে আগ্রহী