ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে হবে

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত চার মাস ধরে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। অচলাবস্থা কাটিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার দাবিতে গতকাল শনিবার পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা প্রতীকী বিষপান ও গলায় ফাঁস দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ অবশ্য সময় চাওয়ায় আন্দোলন সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, দীর্ঘদিন ধরে চলাবস্থার কারণে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। বাসচাপায় পিষ্ট হয়ে এক ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলায় গত বছরের ৩০ নভেম্বর থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার দাবিতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত বুধবার প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে কয়েকজন শিক্ষার্থী সিরিঞ্জে নিজেদের শরীরের রক্ত বের করে সড়কে ছিটিয়ে দেয়। কেন একটি বিশ্ববিদ্যারয় দীর্ঘদিন বন্ধ রাখা হয়েছে? গত বছরের ৩০ নভেম্বর বাসচাপায় এক শিক্ষার্থী নিহত হয়। এর প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া করা ৩৫টি বাস পুড়িয়ে দেয়। দীর্ঘ ৩৮ দিন পর জানুয়ারির প্রথমে ক্যাম্পাস খোলা হলে নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে দু দিনের মাথায় ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর এমন কী পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাস খুলে দিতে নিরাপদ মনে করছে না?

একজন শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে যেমন আগুন ধরিয়ে বাস পুড়িয়ে দেয়া সমাধান নয়, তেমনই স্বায়ত্তশাসিত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমস্যা যতো জটিলই হোক, একটানা সাড়ে তিন মাস বন্ধ রাখা দায়িত্বশীলতার পরিচয় হতে পারে না। অব্যাহত অচলাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষার্থী যেমন অনিশ্চয়তার মধ্যে, তেমনি প্রতিযোগিতামূলক চাকরির পরীক্ষাসমূহেও তারা পিছিয়ে পড়ছে। স্বাভাবিকভাবে শিক্ষাই যখন একটি উচ্চশিক্ষালয়ের প্রধান কার্যক্রম, তখন যেকোনো কারণেই হোক, দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রাখা চলে না। বন্ধ করে রাখা হলে প্রতিষ্ঠানটির মূল উদ্দেশ্য ফিকে হয়, নষ্ট হয় তার ভাবমূর্তিও।

এমনিতেই ভয়াবহ সেশনজট ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিষফোঁড়ার মতো হয়ে উঠেছে। সুতরাং আর বিলম্ব নয়। একই সাথে শিক্ষার্থীদেরও অনুধাবন করতে হবে, যেকোনো নির্মম অঘটনেও আইন নিজ হাতে তুলে নেয়ার পরিণাম ভালো হয় না। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সেটা উচিতও নয়। কোনো দুর্ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। সহপাঠী হারানোর কষ্ট সহ্য করা কঠিন। এরপরও প্রতিক্রিয়ায় অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা পরিণত বোধের পরিচায়ক নয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম স্বাভাবিক করার যথাযথ ব্যবস্থা যতো দ্রুত সম্ভব হবে, ততোই মঙ্গল।