ইরাকে আটকা পড়া বাংলাদেশিদের দ্রুত দেশে ফেরাতে হবে

 

বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম এবং প্রধান মাধ্যম এখন শ্রম। মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে বিশ্বের অধিকাংশ এলাকায় কম বেশি বাংলাদেশের শ্রমিক রয়েছে। তাদের পরিশ্রমে অর্জন করা বিদেশি মুদ্রা আমাদের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে রেখেছে। অথচ ওসব প্রবাসী শ্রমিকদের প্রতি দরদী দৃষ্টির যথেষ্ট অভাব পরিলক্ষিত হয়। মালয়েশিয়ায় নতুন করে পারমিট নেয়ার শর্ত পূরণ করতে গিয়ে সে দেশে থাকা অসংখ্য প্রবাসীকে বাংলাদেশ অ্যাম্বেসিতে নিযুক্তদের গড়িমসির কারণে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। এখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে ইরাকে আটকে পড়া অসংখ্য বাংলাদেশি শ্রমিক। প্রবাস কল্যাণ মন্ত্রী যথাযথ সময়ে ইরাকে আটকেপড়া শ্রমিকদের দেশে ফিরতে সকল প্রকারের সহযোগিতা করা হবে বলে ঘোষণা দিলেও বাস্তবে তার মিল খুঁজে পাচ্ছে না ইরাকের বাগদাদ উপশহরের ক্যাম্পে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা। সেখানে চুয়াডাঙ্গা জেলারও বেশ কয়েকজন রয়েছেন। তাদেরই একজন মোবাইলফোনে অবর্ণনীয় কষ্টের কথা জানিয়ে সহযোগিতা চেয়েছেন। জনসংখ্যা বিস্ফোরণের দেশে জনগণকে বোঝা না ভেবে শক্তিতে রূপান্তর করতে পারলে অবস্থার আমূল পরিবর্তন হতে বাধ্য। সে লক্ষ্যে দেশে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধির নানামুখি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারিভাবে বিদেশে জনশক্তি বিক্রির বাজার তৈরির করে তার সন্ধান দেয়ার চেয়ে ব্যক্তি উদ্যোগেই বিদেশে শ্রম বাজার খুঁজে নিয়ে নিজেদের ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর জন্য ছুটেছেন, ছুটছে অসংখ্য মানুষ। বিদেশে শ্রমি বিক্রি করে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা তারা দেশে পাঠাচ্ছে। এর সুফল ভোগ করছে দেশ, দেশের মানুষ। অথচ বিদেশে যারা শ্রমিক বিক্রি করছে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি যতোটা যত্মের সাথে দেখা দরকার ততোটা তো দেখা হচ্ছে না, উল্টো বাংলাদেশ অ্যাম্বেসিতে নিযুক্তদের কারো কারো কাছে হয়রানির শিকার হতে হয় তাদের। ইরাক যুদ্ধ বিধস্ত দেশ। নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টার মাঝে সুন্নি বিদ্রোহীরা একের পর এক শহর দখলে নিচ্ছে। সরকারও ওসব শহর দখল মুক্ত করতে সেনা অভিযান চালাচ্ছে। বিদ্রোহী দমনে জঙ্গি বিমানও প্রস্তুত করেছে। এ অবস্থায় সেখানে বিদেশি শ্রমিকদের দিন কাটছে কতোটা অনিশ্চয়তার মধ্যে তা ভাবলেই গা শিউরে ওঠে। প্রতিবেশী দেশ ভারত। ইরাকে ভারতীয় শ্রমিকও রয়েছে। তাদের সুহালে দেশে ফেরাতে যতোটা ভারতীয় অ্যাম্বেসি আন্তরিক ততোটা দূরাস্ত বাংলাদেশ আ্যাম্বেসি থেকে বার বারই নাকি বলা হচ্ছে ‘দেখছি’। দেখি দেখছি করে কালক্ষেপণের ইরাকে আটকে পড়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের নাভিশ্বাস উঠেছে। তারা তাদের পরিবার পরিজনের সাথেও যোগাযোগ করতে পারছেন না। তারা যে কোম্পানিতে চাকরি করতেন সেই কোম্পানি থেকে পাওনা মেটানো দূরের কথা তাদের কেউ শ্রমিকদের সাথে যোগাযোগই করছেন না। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। ফিরবে কীভাবে?

বিদেশে আটকে পড়া শ্রমিকদের বিষয়টি কোনোভাবেই খাটো করে দেখা উচিত নয়। কেন না, প্রবাসী শ্রমিকদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা আমাদের দেশকে সচ্ছল রাখতে সহায়তা করছে। প্রবাসীদের নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে আন্তরিক না হলে এবং যে কোনো সংকটে তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত না বাড়ালে অনেকেই বিদেশে শ্রম বিক্রি করতে যেতে আগ্রহ হারাবে। দেশে নাগরিকের মূল্য নাই বা থাক, বিদেশে যারা হাড়ভাঙা পরিশ্রমের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে তাদের অবমূল্যায়ন আত্মঘাতি। অবশ্যই বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি নাগরিকের মূল্যায়ন দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনবে। যদিও দেশে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় দক্ষক অর্জন ছাড়াই বিদেশের মাটিতে গিয়ে নিম্নমানের কাজ করতে হয়, তবুও নাগরিক হিসেবে তাদের অবমূল্যায়ন কাম্য নয়। ইরাকে আটকে পড়া শ্রমিকদের সুহালে দ্রুত ফেরাতে হবে। দেশে ফিরতে সহায়তা করেই দায়িত্ব শেষ করলে হবে না, তাদের অন্য দেশে যাওয়া এবং শ্রম বিক্রির সুযোগ করে দিতে হবে।