ইটভাটার অনিয়ম পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে অন্যতম অন্তরায়

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ পশ্চিম-দক্ষিণাঞ্চলের ইটভাটাগুলোর অধিকাংশেই নানা অনিয়ম বিরাজমান। কাঠ পোড়ানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ, অথচ পোড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কিছু ইটভাটায় কাঠের স্তুপ সাজিয়েও রাখা হয়। আবাদি জমির মাটি কেটেও ইট তৈরি করা হয়। আবাসিক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে পরিবেশ দূষণ করেও ইটভাটার কার্যক্রম  পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। প্রধানত কৃষিকাজের জন্য দেশে আমদানিকৃত ট্রাক্টর ইটভাটার মাটিটানাসহ ইট বহনের কাজে লাগানো হচ্ছে। মাটি বহন করা ট্রাক ও ট্রাক্টরের ট্রলি থেকে মাটি পড়ে রাস্তা ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলার অভিযোগও নতুন নয়। প্রতিকারে মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়, মোটা অঙ্কের অর্থদণ্ডাদেশও দেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক। এরপরও ইটভাটার অনিয়ম পুরোটা দূর হয় কি?

 

ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ নয়, কয়লা পোড়াতে হবে। নির্গত ধোয়া যাতে পরিবেশ দূষিত করতে না পারে সে লক্ষ্যে কমপক্ষে ১২০ ফুট উঁচু চিমনি লাগাতে বলা হলেও তা পরিবহার করে এবার থেকে ঝিকঝাক পদ্ধতিতে ইট পোড়ানোর কথা বলা হয়। অবশ্য এবার এ বিধি কিছুটা শিথিল করে আগামী জুন পর্যন্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইটভাটা মালিকপক্ষ। ভূ-পরিমণ্ডলের ওপরের মাটি আবাদের জন্য উপযোগী। তা তুলে নিয়ে ইট তৈরি করলে আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ কারণেই আবাদি জমির মাটি তুলে ইট তৈরি না করার জন্য বলা হয়েছে। কোনো কোনো ইটভাটা মালিক এ নিয়ম মানলেও অনেকেই তা থোড়াই কেয়ার করেন। আর মাটি বহন করতে গিয়ে ট্রাক ও ট্রাক্টরের ট্রলি থেকে ছিটকে পড়ে রাস্তা ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা হয়। এটেল মাটি পিচঢালা রাস্তায় পড়ে ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। ওই মাটির কারণে মাঝে মাঝেই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাণ ঝরে। এদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়ার জন্য প্রশাসনের তরফে মাঝে মাঝে তাগিদ দেয়া হলেও প্রধান প্রধান সড়কের ধারের ইটভাটার মালিকদেরকে সেদিকে আন্তরিক হতে দেখা যায় না। আর ইটভাটায় ট্রাক্টর, পাউয়ার টিলার? কোনো কাজে লাগানো হচ্ছে না? ইটভাটায় তো এর ব্যবহার প্রকাশ্যে।

 

বিধি-বিধান থাকলেই হয় না, তার যথাযথ প্রয়োগ প্রয়োজন। আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ অনিয়ম দূর করতে সহায়ক। মাঝে মাঝে নয়, লাগাতারভাবে অনিয়ম বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হলে অনিয়ম দূর হতে বাধ্য। ইটভাটায় ইট পোড়ানোর মধ্যদিয়ে পরিবেশ তো দূষণ হচ্ছেই, এরপর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় গাছগাছালি দেদারছে উজাড় করা হচ্ছে। কোনো ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর ন্যূনতম এখতিয়ার নেই। তা হলে প্রকাশ্যে কাঠের স্তুপ রেখে তা পোড়ানো হয় কোন সাহসে? প্রশাসনকে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। পরিবেশ রক্ষার্থে জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অক্ষরে অক্ষরে পালনের বিষয়টি নিশ্চিত করা দরকার। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারলে আমরা কেউই নিরাপদ নই। আবাদি জমি আমাদের আহার জোগায়, গাছগাছালি তথা বৃক্ষরাজি দেয় অক্সিজেন।