আসন্নবাজেটে বাড়ছে মূল্য সংযোজন করেরআওতা

 

আগামী২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের বাজেট নতুন মূল্য সংযোজন করও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২অনুসরণ করে প্রণীত হচ্ছে বলে জানা গেছে। এর ফলে বাজেটে মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাট) আওতা অনেক বেড়ে যাবে। যেসব খাতে ৪ থেকে ৬ শতাংশ ভ্যাট ছিলো,সেসবখাতে প্রকৃত মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। সবক্ষেত্রেই এ হারেভ্যাট আরোপ করা হবে। স্বভাবতই এতে বেড়ে যাবে পণ্যমূল্য,যার মাশুল দিতে হবেসাধারণ মানুষকে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। জনগণের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে যে অর্থআদায় করার নীতি তা আর যাই হোক,জনবান্ধব বাজেট হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না।এমনিতেই নিত্যপণ্যের দামবৃদ্ধি,মাত্রাতিরিক্ত বাড়ি ভাড়া,উচ্চ পরিবহনব্যয় আর সেবা খাতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের কারণে নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনওষ্ঠাগত। এর ওপর তাদের ঘাড়ে করের বোঝা চাপানো হলে জীবন নির্বাহ আরও কঠিনহয়ে পড়বে। সরকারের উচিত এ বাস্তবতা অনুধাবন করেই ভ্যাটের আওতা নির্ধারণকরা। শুধু রাজস্ব বাড়ানোই লক্ষ্য হলে জনস্বার্থ হবে উপেক্ষিত। এটি কাম্যনয়।

নতুন অর্থবছরে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৬ হাজার ৫শকোটি টাকা। এ বছর প্রত্যাশিত ভ্যাট আদায়ের সম্ভাবনা নেই। ফলে আগামী বছরভ্যাট আদায়ের প্রবৃদ্ধি ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। এ বিশাল প্রবৃদ্ধির রাজস্বআদায় করা হবে নতুন সংস্কারমূলক পদক্ষেপ এবং ভ্যাটের আওতা ও আদায় ব্যাপকতরকরে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে শুধু রাজস্ব বাড়ানোর বিষয়টিই গুরুত্ব পাচ্ছে।সরকারকে রাজস্ব আহরণে ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে হবে অবশ্যই। তবে সে লক্ষ্যে নীতিটিএমন হওয়া উচিত নয়, যাতে সাধারণ মানুষের কষ্ট আরও বাড়ে। লক্ষ্যমাত্রাঅর্জনে আন্তরিক প্রয়াসের সাথে রাজস্ব প্রশাসনকে শক্তিশালীকরণের দিকেওদৃষ্টি দিতে হবে। রাজস্ব আহরণের গতি বাড়াতে শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশঘটাতে হবে। দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে। নয়তো ব্যবসায়ীদেরব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা আরও বাড়বে। এমনিতেই দেশে ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণেসুদের হার বেশি,যা ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশের পথে একটি বড় অন্তরায়। তার ওপরব্যবসা পরিচালনা ক্ষেত্রে রয়েছে গ্যাস-বিদ্যুত সংকটসহ নানা সমস্যা। বাজেটেএসব সমস্যা নিরসনের দিকনির্দেশনা থাকা জরুরি।

ভ্যাটের আওতা বাড়ার ফলেতা ফাঁকির প্রবণতা বৃদ্ধির আশঙ্কাও প্রবল,যদি না রাজস্ব প্রশাসন এক্ষেত্রেদক্ষতার প্রমাণ রাখতে সক্ষম হয়। মনে রাখা দরকার,কর কম আদায়ের জন্য করদাতা ওআদায়কারী উভয়েই দায়ী। অনেক ক্ষেত্রে কর কর্মকর্তারাই কর ফাঁকি দেয়ারফাঁকফোকর দেখিয়ে দেন। এটি উৎকোচের বিনিময়েই করা হয়। রাজস্ব আদায় বাড়াতে করকর্মকর্তাদের সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাজস্ব বাড়াতেসরকারের এমন কিছু করা উচিত হবে না,যাতে সাধারণ মানুষের ওপর খড়গ নেমে আসে।