আল বিদা মাহে রমজান

 

প্রফেসর . মুহাম্মদ ইউসুফ আলী: আজ ২১ রমজান। আজ থেকে শুরু হচ্ছে জা‎হান্নাম হতে মুক্তির দশক বা নাজাতের দশক। গতকাল মাগরিবের পর পরই ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ নিজ নিজ মসজিদে এতেকাফ শুরু করেছেন। পূর্বে এই কলামে এতেকাফের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছিলো। আজ এতেকাফের কিছু আনুষাঙ্গিক জরুরি বিষয়ের ওপর আমাদের আলোচনা সীমাবদ্ধ থাকবে। এতেকাফের আসল উদ্দেশ্য হলো শবেকদরের তালাশ করা এবং একান্ত নিভৃতে মহান আল্লাহর সান্নিধ্য হাসিল করা। পুরুষরা যেমন এতেকাফ করেন, ঠিক তেমনি মহিলারাও এতেকাফ করতে পারেন। তবে মহিলাদের জন্য বাড়িতে বসে এতেকাফ করাই উত্তম এবং মসজিদে এতেকাফ করা মাকরুহে তাহরীমী অর্থাৎ হারামের কাছাকাছি। মহিলাদের এতেকাফ পুরুষের এতেকাফের চেয়ে সহজ। তারা শুধু ঘরের একটি নির্দিষ্ট জায়গাকে পর্দা দ্বারা ঘিরে এতেকাফের জন্য ঠিক করবেন এবং এতেকাফের নিয়ত করবেন। দরকার হলে তিনি এতেকাফে বসেই কারও দ্বারা ঘরের প্রয়োজনীয় কাজকর্ম করায়ে নিতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে পারেন। যেকোনো মসজিদে যেখানে নিয়মিত জামাত হয় সেখানেই এতেকাফ করা যায়। হাদিসের বর্ণনা মতে রমজানের কয়েকদিন, ১০ দিন, ২০ দিন অথবা পুরা রমজানই এতেকাফ করা যায়। হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নবী করীম (সাঃ) হায়াতের শেষ পর্যন্ত নিয়মিত শেষ দশকে এতেকাফ করেছেন এবং তার ওফাতের পর তার পবিত্র স্ত্রীগণও এতেকাফ করেছেন (বুখারি, মুসলিম)। আর এক হাদিসে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, প্রিয় নবী করীম (সাঃ) প্রতি রমজানের শেষ ১০ দিন এতেকাফ করতেন। তবে তার ইন্তেকালের বছরে তিনি ২০ দিন এতেকাফ করেন (বুখারি)। তবে সুন্নত মোয়াক্কাদাহ এতেকাফ হলো শেষ দশ দিন। অর্থাৎ মহল্লার পক্ষ থেকে যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এতেকাফ করেন তাহলে ওই মহল্লার সবার জিম্মাদারি আদায় হয়ে যাবে। আর যদি মহল্লার কেউই এতেকাফ না করে তাহলে সবাই গুনাহগার হবে। তবে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে এতেকাফে বসা এবং বসানো কোনোটাই ঠিক নয়, বরং গুনাহের কাজ। আমরা অনেক সময় এতেকাফে বসে দুনিয়ার আজে বাজে গল্পে লিপ্ত হই। কিন্তু এটা ঠিক নয়। এতে এতেকাফের ফয়েজ-বরকত নষ্ট হয়ে যায়। এতেকাফের সময়টুকু নফল নামাজ, কাজা নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলীল, দ্বীনি কিতাব পাঠ এবং অন্যান্য ইবাদতে লিপ্ত থাকা উচিত। এতেকাফ আমাদের জন্য বছরে একবার দুনিয়ার মায়ামহ ত্যাগ করে একান্তভাবে আল্লাহকে ডাকার সুযোগ করে দেয়। এ জন্য এই সময়টুকুর কদর করা দরকার এবং মাওলার ধ্যানে নিজেকে নিমগ্ন রাখা উচিত। (লেখক: অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়)।