আলমডাঙ্গা পল্লি বিদ্যুতের ইলেকট্রিশিয়ান সুমনের বিরুদ্ধে কমিটিকে ম্যানেজ করতে লাখ টাকার মিশনে নামার অভিযোগ

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: পল্লি বিদ্যুত সমিতির আলমডাঙ্গা জোনাল অফিসের ইলেকট্রিশিয়ান রামদিয়ার সুমনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে গ্রাহকদের নিকট থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে তদন্তের মেয়াদ বাড়িয়ে নেয়া হলেও তদন্ত শুরু করেনি কমিটি। অভিযোগ উঠেছে তদন্ত কমিটি ম্যানেজ করতে অভিযুক্ত সুমন লাখ টাকার মিশনে নেমেছেন।

জানা গেছে, পল্লি বিদ্যুতের সংযোগ দিতে অবৈধভাবে ৩/৪ গুণ বেশি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ তুলে পল্লি বিদ্যুতের ইলেকট্রিশিয়ান আলমডাঙ্গা রামদিয়ার সুমন আলীর বিরুদ্ধে প্রতারিত পৃথক ৬ গ্রাহক গত ৭ জুন লিখিত অভিযোগ করেছেন। রামদিয়া গ্রামের প্রতারিত ৬ গ্রাহক মেহেরপুর পল্লি বিদ্যুত সমিতির আলমডাঙ্গা জোনাল অফিসের ডিজিএম’র নিকট লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেন। অভিযোগকারীরা হলেন- রামদিয়া গ্রামের মৃত আমির হোসেনের ছেলে আলম হোসেন, সেকেন জোয়ার্দারের ছেলে ফরিদ জোয়ার্দার, মৃত মসলেম উদ্দীনের ছেলে মাসেম আলী, ওয়াজেদ আলীর স্ত্রী ফাতেমা খাতুন, জামাল উদ্দীনের স্ত্রী সেলিনা খাতুন ও আবুল লস্করের ছেলে মকবুল লস্কর। অভিযোগপত্রে তারা অভিন্ন ভাষায় উল্লেখ করেছেন, পল্লি বিদ্যুতের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইলেকট্রিশিয়ান রামদিয়া গ্রামের নিজাম উদ্দীনের ছেলে সুমন আলীর সাথে গ্রামের সকলের মতো তারাও পল্লি বিদ্যুতের সংযোগ নিতে যোগাযোগ করেন। সে সময় সুমন আলী বিদ্যুত সংযোগ বাবদ তাদের নিকট থেকে ১১/১২ হাজার করে টাকা করে আদায় করে বিদ্যুত সংযোগ দিয়েছেন। এমনকি সুমন আলী সবাইকে নানাভাবে অফিসে যেতে নিরুৎসাহিত করেছেন। অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সুমন আলী এলাকার প্রায় শতাধিক গ্রাহকের নিকট থেকে বিদ্যুত সংযোগ বাবদ প্রকৃত খরচের ৩/৪ ডবল করে অর্থ আদায় করেছেন। তারা উল্লেখ করেছেন, বর্তমানে ওই গ্রামের গ্রাহক সাধারণ জানতে পেরেছেন, নতুন সংযোগ নিতে সমুদয় খরচ মিলে সর্বোচ্চ ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা খরচ হয়। গ্রামের ছেলে হয়ে সুমন আলী নিজ গ্রামের প্রায় শতাধিক বিদ্যুত গ্রাহকের নিকট থেকে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ নিয়ে কেউ কথা তুললে ইলেকট্রিশিয়ান তার বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছেন। তারা ইলেকট্রিশিয়ান সুমন আলীর বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট।

এরই প্রেক্ষিতে গত ১২ জুন সুমনের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। পল্লি বিদ্যুত সমিতির আলমডাঙ্গা জোনাল অফিসের এজিএম সাদিকুর রহমান ও জুনিয়র প্রকৌশলী খাইরুল ইসলামকে নিয়ে ২ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রথমে ৭ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট ডিজিএম’র নিকট জমা দেয়ার কথা থাকলেও তদন্ত শুরুই করা হয়নি। ৭ কার্যদিবস অতিবাহিত হলে পুনরায় তদন্তের মেয়াদ ১০ দিন বাড়িয়ে নেয়া হয়েছে। এখনো তদন্ত শুরু না হওয়ায় তদন্ত কমিটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে অভিযোগ করেছেন, কর্মকর্তাদের স্বার্থে ইলেকট্রিশিয়ান সুমনের মতো দুর্নীতিবাজদের পুষে রাখা হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন তো মামুলি আইওয়াশ। দুর্নীতিবাজ ইলেকট্রিশিয়ান সুমন তদন্ত কমিটিকে ম্যানেজ করতে লাখ টাকার মিশনে নেমেছেন বলেও অনেকে অভিযোগ তুলেছেন।

এদিকে তদন্ত কমিটির প্রধান এজিএম সাদিকুর রহমান বলেছেন, অন্য কোনো কারণে নয়, শুধু জুন মাসের ব্যস্ততার জন্য তদন্তের সময় বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া কুষ্টিয়া অঞ্চলের বৈদ্যুতিক লাইনের অবস্থা খুব বেশি খারাপ। তদন্তের ভারপ্রাপ্ত ২ জনকেই এক সাথে সে কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে তদন্ত শুরু করতে পারেননি। তবে অফিসের একটি বিশেষ সূত্র জানিয়েছে, ইলেকট্রিশিয়ান সুমনের দুর্নীতি তো ওপেন সিক্রেট। এটা প্রমাণে কোনো বেগ পেতে হবে না।