আর যেন দুর্নীতির অভিযোগ না ওঠে

 

অবশেষেদীর্ঘ প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণে সরকার ও চায়না মেজরব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হলো। চুক্তি অনুযায়ীসেতু নির্মাণে ব্যয় ধার্য করা হয়েছে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা। মূল সেতুরনির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে চার বছরে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে,২৬ জুনচূড়ান্ত দরপত্র আহ্বানের পর চারটি প্রাকযোগ্য কোম্পানির তিনটি দরপত্রসংগ্রহ করা হয়। কারিগরি প্রস্তাবও জমা দেয় তিন কোম্পানি। কিন্তু বাকি দুটিকোম্পানি চূড়ান্ত আর্থিক প্রস্তাব জমা না দেয়ায় পদ্মা সেতুর কাজ পায় চায়নামেজর ব্রিজ কোম্পানি।বলা যায়, পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়টি সরকারেরজন্য একটি স্পর্শকাতর বিষয়। ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল এ সেতু নির্মাণে চুক্তিহয়েছিলো বিশ্বব্যাংকের সাথে। সে সময় এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ১২০ কোটিডলারের ঋণ সহায়তা দেয়ার কথা ছিলো।

এছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক,ইসলামী উন্নয়নব্যাংক ও জাপানের দেয়ার কথা ছিলো ১১৫ কোটি ডলার। বাকি ব্যয়ভার বহন করার কথাছিলো বাংলাদেশ সরকারের। সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগতুলে ওই বছর অক্টোবরে ঋণ সহায়তা স্থগিত ঘোষণা করে বিশ্বব্যাংক। এরপর ঘটেগেছে অনেক নাটকীয়তা। বিশ্বব্যাংক চার শর্তে ফিরে আসার ঘোষণা দিয়েছিলো। সেসবশর্ত পূরণে এগিয়েও এসেছিলো সরকার। তবে মূলত একটি শর্ত পূরণ নিয়ে সমঝোতা নাহওয়ার কারণেই বিশ্বব্যাংক অনড় অবস্থান নেয়, যে কারণে শেষ পর্যন্ত ভেস্তেযায় সব আয়োজন। শর্তটি ছিলো,দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের দায়ে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীসৈয়দ আবুল হোসেনকে অভিযুক্ত করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের পর প্রকল্পের অন্যঅংশীদাররাও একে একে সরে পড়ে। ফলে অনিশ্চিত হয়ে যায় বহু কাঙ্ক্ষিত পদ্মাসেতুর বাস্তবায়ন। একপর্যায়ে সরকারের পক্ষ থেকে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুনির্মাণের কথাও বলা হয়। প্রয়োজনে মালয়েশিয়া,চীন ও ভারতের আর্থিক সহায়তানেয়া হবে, এমন কথাও বলা হয়েছিল।

উল্লেখ্য, এ সেতু নির্মাণে সহায়তা দিতে এতিনটি দেশই আগ্রহ প্রকাশ করেছিলো। অবশেষে বিষয়টি চূড়ান্ত হলো একটি চীনাকোম্পানির সাথে চুক্তির মধ্যদিয়ে।
চুক্তি তো হলো,এখন দেখার বিষয় শেষপর্যন্ত কী হয়। ইতঃপূর্বে পদ্মা সেতু নির্মাণ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগেবহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এ দেশের প্রকল্পে ঋণপ্রদানে দাতা সংস্থাগুলোর অনীহা বেড়েছে। সবচেয়ে বড় কথা পদ্মা সেতুরবাস্তবায়ন পিছিয়ে গেছে। কাজেই এবার যেন এ প্রকল্পে সামান্যতমও অনিয়ম ওদুর্নীতির ঘটনা না ঘটে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। নির্মাণকার্যক্রমে মূলত তিনটি বিষয়ের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে- সেতুটিমানসম্মতভাবে নির্মাণ করা, ক্রয় প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হওয়া এবং বাস্তবায়ন কাজস্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত হওয়া। মোদ্দাকথা,সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ওজবাবদিহিতার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে কয়েকটি মনিটরিং সেলগঠন করে দুর্নীতি-অনিয়মের সুযোগ নিশ্ছিদ্র করতে হবে।

পদ্মা নদীর ওপরসেতু হবে, এটা মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। এ সেতু বাস্তবায়ন হলে দেশেরদক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলা রাজধানী ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চলের সাথে আরওনিবিড়ভাবে যুক্ত হবে। বাড়বে মংলা বন্দরের গুরুত্ব ও ব্যবহার। স্থলবন্দরবেনাপোল ও ভোমরাকে ঘিরেও তৈরি হবে নতুন সম্ভাবনা। এতে জিডিপি প্রবৃদ্ধিবাড়বে নিঃসন্দেহে। মোটকথা, পদ্মা সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় তিন কোটিমানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে আসছে। সেতুনির্মাণকালেও প্রায় এক লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করাহচ্ছে। সব কিছু মিলিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলে একধরনের কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে। আমরা এ প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়নেরঅপেক্ষায় রইলাম।