আন্দোলনের সব ধকলই আমজনতার ঘাড়ে কেন?

রাজনৈতিক অস্থিরতা আর কতোদিন? জবাব মিলছে না। চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দেশে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা আজ বৃহস্পতিবার শপথ গ্রহণ করছেন। অপরদিকে বিরোধীদলের তিন দফায় আহুত লাগাতার ১০৮ ঘণ্টার হরতাল শেষ হয়েছে। অনির্দিষ্টকালের সড়ক, নৌ ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। যেমন ঘটছে নাশকতা, তেমনই চলছে গ্রেফতার অভিযান। সাধারণ মানুষ এসবে যে অতিষ্ঠ তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। আর নয়, দেশের সাধারণ মানুষ স্বস্তি চায়।

বিরোধীদল ছাড়া নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে যেমন প্রশ্ন রয়েছে, তেমনই বিরোধীদলের লাগাতার অবরোধ-হরতালের সাধারণ মানুষের কতোটুকু সমর্থন রয়েছে তা নিয়েও উত্থাপিত প্রশ্ন নতুন নয়। একপক্ষ দেশের সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার ফেরানোর কথা বলে আন্দোলনের নামে অবরোধ-হরতাল চাপিয়ে দিচ্ছে, অপরপক্ষ সংবিধানের বাধ্যবাধকতার কথা বলে নির্বাচন থেকে শুরু করে সরকার গঠনের পথে হাঁটছে। কোন পক্ষের যুক্তি কতোটা গ্রহণযোগ্য, কোনপক্ষ কোন কোন ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে তা রাজনৈতিক সচেতনমহলের কাছে অস্পষ্ট নয়। দেশের বৃহত দুটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা-নেতৃত্বের যুক্তির ফুলঝুরির চেয়ে দেশবাসীর কাছে এখন স্বস্তির বাণীই অধিক গুরুত্বপূর্ণ। বিরোধী নেতাকর্মীদের যখন গ্রেফতার হতেই হচ্ছে তখন গণগ্রেফতারে এগিয়ে এসে অবরোধ-হরতাল পরিহার করাই কি জনসমর্থনযোগ্য নয়। কে ভাবে কার কথা? আন্দোলনের সব ধকলই চাপানো হয় আমজনতার ঘাড়ে। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, আমজনতা রাজনৈতিক হিংসা এবং চরম অনিশ্চয়তায় ক্ষুব্ধ, পিঠ দেয়ালে ঠেকার উপক্রম।

আর কতোটা লাশ হলে, আর কতোটা মানুষ অঙ্গার হলে সকল মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে? এ প্রশ্ন যেমন এখন গুরুত্বহীন, কতোদিন পর হরতাল-অবরোধের বদলে বিকল্প কর্মসূচি ঘোষিত হবে? এ প্রশ্নও এখন অকারণ। কারণ উভয় দলই যখন ক্ষমতার মসনদ নিশ্চিত করার বিষয়ে অনড়, তখন আমজনতার কোনো প্রশ্নই কি গুরুত্বানুধাবন করে? কৌশলের বদলে দেশের সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে ক্ষমতার মসনদের পথ মসৃণই গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখে। সেদিকে হাঁটার বদলে অন্যপথ দেশবাসীকে অনিশ্চয়তার মধ্যেই ফেলে। ফেলেছে।