আইনেরশাসন প্রতিষ্ঠায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকাঅপরিসীম

 

নারায়ণগঞ্জসিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও আইনজীবীসহ সাতজনকে অপহরণ ও খুন করার ঘটনায়আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে র‌্যাবের কিছু সদস্যের বিরুদ্ধেসংশ্লিষ্টতার যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে দেশব্যাপি ব্যাপক আলোচনা চলছে। একজনমন্ত্রীপুত্রের বিরুদ্ধেও সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। ফলে ঘটনাটি নিয়েসরকারও যথেষ্ট বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে। কাউকে কোনো ছাড় না দেয়ার জন্যপ্রধানমন্ত্রীকে নির্দেশ দিতে হয়েছে। উচ্চাদালত থেকে অবসরে পাঠানোর‌্যাবের তিন কর্মকর্তাকে অবিলম্বে গ্রেফতারের আদেশ দেয়া হয়েছে।অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া র‌্যাবের কার্যক্রমই বন্ধ করেদেয়ার দাবি জানিয়েছেন। সুধীজনরাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর আমূলসংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জের ঘটনাটিকে র‌্যাবেরভাবমূর্তির ওপর একটি বড় ধরনের আঘাত হিসেবেই গণ্য করা যায়। অভিযোগ আগেওউঠেছে এবং অনেক অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ১০ বছরে প্রায় দু হাজার র‌্যাবসদস্যের সাজাও হয়েছে। তার অর্থ এই নয় যে পুরোবাহিনী অকার্যকর হয়ে গেছে।অনেকেই মনে করেন, ত্রুটি-বিচ্যুতি সত্ত্বেও মূলত র‌্যাবের কারণেই দেশেরআইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বড় ধরনের অধঃপতন থেকে রক্ষা পেয়েছে। মাথা কেটে ফেলাযেমন মাথাব্যথা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় নয়, তেমনি বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনায়র‌্যাবের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়াটাও কোনো সমাধান নয়। বরং যেসব কারণে এধরনের ঘটনা ঘটছে কিংবা যেসব দুর্বলতার কারণে কোনো কোনো সদস্য এ ধরনের ঘটনাঘটানোর সুযোগ পাচ্ছেন, সেগুলো বন্ধ করার দিকেই আমাদের বেশি নজর দিতে হবে।

আইনেরশাসন প্রতিষ্ঠায় যেকোনো দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর ভূমিকাঅপরিসীম। তা সত্ত্বেও আমাদের দেশে কোনো কোনো বাহিনীর, বিশেষ করেপুলিশবাহিনীর একটি বড় অংশের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য ক্ষতিকরবহু কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। তার মধ্যে আছে গ্রেপ্তার বা আটক বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসায় সহযোগিতা, অর্থের বিনিময়ে অপরাধীদের নানাভাবেসহায়তা করা, দুর্বল বা বিকৃত তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া, কখনো কখনো নিজেরাইঅপরাধে জড়িয়ে যাওয়াসহ আরো অনেক কিছু। পুলিশের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আগেওছিলো। কিন্তু গত দু-তিন দশকে অভিযোগের পাল্লা এতোটাই ভারী হয়েছে যে তা দেশেরআইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতির কারণ হয়ে উঠেছে। আর এর জন্য মূলতদায়ী পুলিশের রাজনৈতিক অপব্যবহার এবং নিয়োগ-পদোন্নতিসহ সর্বক্ষেত্রেপুলিশের রাজনীতিকরণ। পুলিশকে যদি ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের কথা শুনেকাজ করতে হয়, তাহলে তাদের পক্ষে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ থাকেনা। আর তখনই বাহিনীর সুযোগসন্ধানী সদস্যরা তোষণের পাশাপাশি অনৈতিককর্মকাণ্ডের সুযোগ করে নেন। এ থেকে পুলিশবাহিনীকে বের করে আনতে হবে।বাহিনীর অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা কর্মকাণ্ড শক্তিশালী করতে হবে। কারো কোনো রকমস্খলন দেখলে সাথে সাথে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আর এজন্য সবচেয়েজরুরি হচ্ছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা। আমরা আশা করি, বর্তমান সরকার সেই সদিচ্ছাপ্রদর্শন করবে।