আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে দরকার দায়িত্বশীলদের আন্তরিকতা

 

বোমাকে পটকা বলে চালানোর চেয়ে প্রকৃত ঘটনা অকপটে স্বীকার করাই ভালো। সত্য আড়াল করে কখনই কোনো সমস্যার সমাধান আশা করা যায় না, হয় না, হয়নি। মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুষ্কৃতীদের এখন অন্যতম মারণাস্ত্র হলো বোমা। এলাকায় ডাকাতদল প্রতিরোধের মুখে বোমা নিক্ষেপ করে। বোমাঘাতে প্রতিরোধকারীদের মৃত্যুর কয়েকটি উদাহরণ যে জনপদে ভয়ঙ্কর খতের মতো হয়ে রয়েছে, সেই জনপদে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত বস্তুকে বোমা না বললেও অন্তত পটকা বলা যায় না। তাতে আতঙ্ক কমে না বরঞ্চ ওই উক্তি আওড়ানো সংস্থা আস্থাহীনতার সংকটে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় সমাজ। গুমরে কাঁদে বিবেক।

মেহেরপুরের মুজিবনগরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি বেড়েছে। মাঝে মাঝে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। গত পরশু রাতে মুজিবনগরের পল্লি বাবুপুরে একদল ডাকাত একটি বাড়িতে ডাকাতি করার পাশাপাশি গৃহকর্তার ছেলেকে অপহরণের অপচেষ্টা করে। প্রতিরোধের মুখে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। গ্রামবাসীকে থামাতে পর পর তিনটি বিস্ফোরণ ঘটায়। স্থানীয়রা বিস্ফোরিত বস্তুকে বোমা বলে দাবি করলেও পুলিশের তরফে বলা হয়েছে ওগুলো বোমা নয়, পটকা। কারণ কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। ডাকাতদলের বোমায় প্রতিরোধকারীদের মধ্যে হতাহতের ঘটনা ঘটলে নিশ্চয় পুলিশের ওই কর্তা পটকা বলে দাবি করতেন না। পটকা হলেও কি আমাদের দেশে তার বৈধতা আছে? ডাকাতি হয়েছে, ডাকাতদল নগদ টাকা মূল্যবান মালামাল ডাকাতি করে নিয়ে গেছে। ডাকাতদলের একজনকেও পুলিশ ধরতে পারেনি। উদ্ধার হয়নি ডাকাতি করা টাকা ও মূল্যবান মালামাল। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, জনগণের আস্থা হারালে পুলিশের এককভাবে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখা অসম্ভব প্রায়। ফলে আস্থাশীল হতে হলে প্রকৃত সত্যকে স্বীকার করেই জনসাধরণের সহযোগিতা নিতে হবে। নিজ নিজ এলাকা স্বাভাবিক রাখতে এলাকাবাসীকেও পুলিশের সহযোগী হিসেবে কাজ করতে হবে। অবশ্য পুলিশের সাহস পেলে এলাকার মানুষ যে কতোটা সাহসী হতে পারে তা নতুন করে বলাই বাহুল্য।

ঘটনার পর পুলিশ নয়, ঘটনার আগেই পুলিশের দক্ষ দায়িত্বশীলতার নজির দেখতে চায় সমাজ। যদিও সমাজে সে আশা অবান্তর। ডাকাতির পর ডাকাত ধরারই কোনো নিশ্চয়তা থাকে না, ডাকাতি হওয়া টাকাসহ মালামাল উদ্ধার? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মামলা হয় না। দু-একটি মামলা হলেও পুলিশের তরফে বলা হয়, ঘটনার পর পুলিশ ডাকাতদলের পিছু নিয়েছে। সন্দেহভাজন ধরা পড়েছে। ডাকাতি হওয়া মালামাল? হদিস মিলছে না। ফলে প্রকৃত দুষ্কৃতীর টিকি ছুঁতে পারা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় একই চিত্র ঘুরে ফিরে উঠে আসে সাধারণ মানুষের সামনে। অপরাধ প্রবণতা হ্রাসে অবশ্যই এলাকায় কর্মসংস্থানের দরকার, একই সাথে দরকার পুলিশের আরো আন্তরিকতা।