আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়

 

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের একই বক্তব্য। পরিস্থিতির কখনো কোনো অবনতি হয় না। অথচ প্রতিদিন সাধারণ মানুষ জীবন দিচ্ছে বেঘোরে। অনেক মানুষ গুম হয়ে যাচ্ছে। অনেকে হয়ে যাচ্ছে খুন। কিন্তু কারা এসব করছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তার কোনো হদিস মিলছে না। মেহেরপুরের সোনাপুর গ্রামের দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর গলা কেটে খুন করা হয়েছে। তাদের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ‘দাবি করা চাঁদা পরিশোধ না করায় তাদের খুন করা হয়েছে।’ বলাবাহুল্য, ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে চাঁদাবাজির প্রবণতা সারা দেশে অব্যাহত রয়েছে। হত্যা করে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু এর বিপরীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর অভিযান দেখা যায় না।

রোববার রাতে গ্রামের একটি চায়ের দোকান থেকে উল্লিখিত দুজন ব্যবসায়ীকে অপহরণ করা হয়। পরে সোমবার দুপুরে গ্রামের মাঠ থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। রাত পৌনে ১১টায় গ্রামের একটি চায়ের দোকানে বসে চা পান করছিলেন মজিদ ও আসাদুলসহ গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা। এ সময় ১০-১২ জন দুর্বৃত্ত তাদের অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায়। এরপর মজিদ ও আসাদুলের পরিবারের কাছে মোবাইলে মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করে তারা। পরিবারের পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। পরদিন কৃষকেরা মাঠে কাজ করার সময় একটি তামাক ক্ষেতে মজিদ ও আসাদুলের গলা কাটা লাশ দেখতে পান। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করে। কী কারণে তাদের হত্যা করা হয়েছে এ ব্যাপারে পুলিশের কাছে কোনো তথ্য নেই। বরাবরের মতো পুলিশ জানিয়েছে, ‘ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশ মাঠে নেমেছে।’ চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও আশপাশের জেলাগুলোতে চরমপন্থিদের উৎপাতের বিষয়টি সবার জানা। মানুষকে অস্ত্র ঠেকিয়ে জিম্মি করে সেখানে চাঁদাবাজি করা হয়। কিন্তু এই দুজনকে খুনের ঘটনা দেখলে মনে হবে সন্ত্রাসীরা নির্ভয়। খুন করে তাদের বিচারের আওতায় আসতে হবে না বলে যেন তারা নিশ্চিত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাজনৈতিক কর্মসূচি দমনে ‘ব্যাপক সফলতা’ দেখিয়েছে গত ক’বছর। কিন্তু এমন দমনাভিযান কখনো রাষ্ট্রের জন্য ভালো কিছু ছিলো না। আগে দরকার সারা দেশে অপরাধী দমন করা। কিন্তু নানা প্রকার অপরাধের ঘটনা প্রতিদিন বর্ধিত হারে ঘটছে। ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করার ঘটনা বাংলাদেশে ঘটে চলেছে। এগুলোকে কঠোর হস্তে দমনের জোরালো উদ্যোগ দেখা যায় না। ফলে ব্যবসায়ীরা সব সময়  ভীতি ও আতঙ্কের মধ্যে থাকেন। কারণ কোনো সময় চাঁদা বাজেরা তাদের জীবন ও সম্পদের ওপর হামলে পড় এই ভয়ে। মেহেরপুরের জোড়া খুনের ঘটনায় খুনিদের খুঁজে বের করতে হবে। তাদের দ্রুততার সাথে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। অন্যথায় দেশবাসীর মধ্যে শঙ্কা আরো বাড়বে।