আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি : জনগণতো সহযোগিতা করতেই চায়

 

চুরি ডাকাতি ছিনতাই যেন লেগেই রয়েছে। গরু বিক্রি করে বাড়ি ফেরার পথে সশস্ত্র ডাকাতদল যেমন টাকা-পয়সা কেড়ে নেয়ার জন্য ওত পেতে থাকছে, তেমনই গরু বিক্রি করতে বড় বড় শহরের হাটে যাওয়ার পথে রাস্তায় রাস্তায় পুলিশি তল্লাশির নামে অর্থ আদায়সহ হয়রানি লেগেই আছে। এসব থেকে পরিত্রাণের যেন উপায় নেই! হতাশা আর হতাশা। চলমান পরিস্থিতির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে অবস্থা যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। অপারগতা নয়, অনিয়ম দুর্নীতি মুক্ত হলে জনগণের সহযোগিতা বেড়ে যাবে। জনগণ তো সহযোগিতা করতেই চায়।

 

একজন প্রান্তিক চাষি গচ্ছিত কিছু অর্থ দিয়ে গরু কেনেন, সেই গরুর বিশেষ যত্ন নিয়ে মোটাতাজা করে তোলেন। তা বিক্রি করতে গিয়ে যখন লোকসান গুনতে হয়, হতে হয় হয়রানি তখন ওই কাজে অনাগ্রহই শুধু সৃষ্টি হয় না, সমাজ তথা দেশের প্রতি দরদেও নেমে আসে ঘাটতি। পুলিশ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজেই নিয়োজিত। জনগণের অর্থেই বেতন ভাতা হয়। সেই পুলিশ নিরাপত্তা দিতে পারছে না অপ্রতুলতার অজুহাতে, এরপর যদি পুলিশ হয় হয়রানির কারণ তাহলে আস্থাহীনতা কোথায় গিয়ে ঠেকে? পুলিশ যখন নিরাপত্তার প্রতীক, নির্যাতিতের আশ্রয়স্থল তখন পুলিশকে সর্বক্ষেত্রেই দায়িত্বশীল হওয়া দরকার। তাতে ঘাটতি মানেই সমাজে বিশৃঙ্খলা বেড়ে যাওয়া।

চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার পশুহাট থেকে বাড়ি ফেরার পথে হাটবোয়ালিয়া সড়কের বৈদ্যনাথপুর মাঠে সশস্ত্র ডাকাতদলের কবলে পড়েন একদল গরু ব্যবসায়ীসহ কয়েকজন প্রান্তিক চাষি। কয়েক লাখ টাকা ডাকাতি করে নেয়া হয়েছে। হাতুড়িপেটা করে তাদের আহতও করা হয়। এর একদিন আগে মেহেরপুর গাংনীর গরিবপুরে ডাকাতির সময় প্রতিরোধ করতে গিয়ে নৃশংস খুনের শিকার হন এক ভ্যানচালক। এর মাঝে গতকাল চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের মাছেরদাইড় গ্রামের একজন চাঁদাবাজকে স্থানীয়রা হাতেনাতে আটক করে পিটুনির পর পুলিশে দিয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে মোবাইলফোনে চাঁদাবাজি তো লেগেই আছে। আর অপহরণ আতঙ্ক? ওটা তো ছায়ার মতোই লেগে আছে।

 

আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে অবশ্যই পুলিশকে এলাকাবাসীর সহযোগিতা প্রয়োজন। অপরাধীরা অবশ্যই হাতেগোনা কিছু বিপথগামী। ওরা সংগঠিত এবং অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘোরে বলেই সমাজের শান্তিপ্রিয় মানুষগুলো শঙ্কিত হয়ে পড়ে। পুলিশ সক্রিয় হলে এবং এলাকাবাসী সোচ্চার হলে সন্ত্রাস দূরাস্ত ছিঁচকে চোরেরও দাঁড়ানোর স্থান থাকে না। পুলিশ এবং সমাজের সাধারণ মানুষের মধ্যে যে দায়িত্বহীনতা পেয়ে বসেছে তা আইনশৃঙ্খলার বর্তমান চিত্র দৃষ্টে দায়িত্বশীলদের কেউ কি অস্বীকার করতে পারবেন?

 

পরিস্থিতি পাল্টাতে হবে। প্রবাসে কষ্টার্জিত অর্থ নিয়ে অনেকেই ঈদপার্বনে বাড়ি ফেরেন। তারা যদি দস্যুতার শিকার হন তাহলে লজ্জা আড়াল করার স্থান থাকে না। ঈদ এলেই বেপরোয়া হয়ে ওঠে প্রতারকচক্রও। পুলিশের পক্ষে একা সব সামলানো প্রায় অসম্ভব। সে কারণেই পুলিশকে জনগণের আস্থা অর্জন করে এলাকাবাসীর সহযোগিতা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার বাস্তবমুখি পদক্ষেপ নিতে হবে। গরুর ট্রাক দেখে ছুটে গিয়ে হরেক অজুহাতে অর্থ আদায়ের বদলে ওদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বই মূলত দেশবাসী পোশাকধারীদের দিয়েছে। পোশাকের মর্যাদা তো রাখতে হবে!