অস্বাভাবিক অপমৃত্যু এবং দায় এড়ানো রেওয়াজ

অস্বাভাবিক অপমৃত্যু এবং দায় এড়ানো রেওয়াজ

সৌরভের তখন বয়স দু বছর। মায়ের ওই-ই একমাত্র সন্তান। সে হিসেবে মা বন্যার বয়স আর কতোই হবে? যতোই হোক, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নাকি মরা গেছে এক বছর আগে। ঠিক যেদিন বন্যা মারা যায়, এক বছর পর সেই দিনেই শিশু সৌরভের লাশ উদ্ধার হয় বাড়ির পাশের পুকুর থেকে। মা ও ছেলের এই অকাল প্রয়াণ নিয়ে প্রশ্ন ওঠা সঙ্গত। যদিও সন্দেহ যতো গাড়ই হোক বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর আড়ালে রহস্যের গন্ধ যতোই ছড়াক জটখোলার ন্যূনতম সম্ভাবনা নেই সব সম্ভবের এই সমাজে। অথচ সমাজ সুন্দর করার অন্যতম শর্ত অপমৃত্যু রোধে স্বচ্ছ তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ।

বড়দের অসতর্কতায় চোখের পলকে পানিতে পড়ে শিশুর মৃত্যু অস্বাভাবিক না হলেও তা যে অনাকাঙ্ক্ষিত অপমৃত্যু তা নিশ্চয় অস্বীকার করা যায় না। সকল অপমৃত্যুই নথিভুক্ত করার বিধান রয়েছে। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী অপমৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে তদন্ত করতে হয়। ময়নাতদন্তেরও বাধ্যবাধকতা স্পষ্ট। এরপরও শুধু অপমুত্যুই নয়, বহু হত্যাকাণ্ডও বেমালুম ধামাচাপা দেয়া হয় বিধি প্রয়োগে পদ্ধতিগত কিছু ত্রুটি ও সমাজের দায়িত্বশীলদের সামাজিক দায়বদ্ধতা এড়িয়ে গড্ডালিকায় গা ভাসানোর রেওয়াজের কারণে। এই রেওজের কারণে ক্ষতিকর বহু প্রবণতা সমাজের রন্ধে রন্ধে শেকড় গেড়েছে, গাড়ছে। এ দশাগ্রস্ত সমাজে শিশু সৌরভের অপমৃত্যু নিয়ে যতো প্রশ্নই ওঠুক কে শুনবে সে কথা?

শিশু সৌরভের মায়ের অকাল মৃত্যু নিয়ে এতোদিন পর পড়শীদের মুখে নানা কথা। মূলত সৌরভের অপমৃত্যুর কারণেই তার মায়ের অপমৃত্যু প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। বছর না ঘুরতেই পিতার দ্বিতীয় বিয়ে, দ্বিতীয় স্ত্রীকে সাথে নিয়ে শ্বশুরাবাড়ি বেড়াতে যাওয়ার সময় প্রথম স্ত্রীর রেখে যাওয়া শিশু সন্তানকে নিরাপদে রাখতে না পারার দায়টুকুও কি সানোয়ার হোসেনকে কষ্ট দেয়নি? তিনি মোমিনপুর ইউনিয়ন পরিষদের একজন নির্বাচিত সদস্য। জনপ্রতিনিধি হলেও তিন বছর বয়সী সন্তানের প্রতি তার দরদ ও দায়িত্ববোধে যে ঘাটতি তা অস্বীকার করা যায় না। তাছাড়া এ ধরনের রহস্যজনক মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উন্মোচনের আগে দাফনেও গ্রাম্য চৌকিদার-দফাদারের নিরবতা সেই গড্ডালিকায় গা ভাসানো রেওয়াজেরই অংশ।

না, আর একজন শিশুরও অপমৃত্যু আশা করা যায় না। আইন প্রয়োগে উদাসীনতা ও সমাজের দায়িত্বশীলদের সামাজিক দায়িত্ববোধ না থাকলে ওই ধরনের মৃত্যু মিছিলে শিশুর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। ফলে সকল অস্বাভাবিক-অপমৃত্যুর প্রকৃত কারণ উন্মোচনে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আইন প্রয়োগে ত্রুটিমুক্ত পদ্ধতি প্রণয়নে আইন প্রণেতাদের নতুন করে ভাবতে হবে। সব কিছু গাঁসওয়া হয়ে গেলে সমাজের দায়িত্বশীলদের গায়ের ওপরও পড়বে আপনজনের পচাগলা লাশ। সে কারণে কালবিলম্ব না করে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ আগামী দিনের সমাজকে করবে সুন্দর।