অসদুপায় অবলম্বনে শিক্ষকের সহযোগিতা

 

প্রকৃত শিক্ষা কখনও সার্টিফিকেট সর্বস্ব হয় না। কিন্তু কোনো দেশ বা সমাজ চাকরির জন্য সার্টিফিকেটকেই যখন সর্বাগ্রে গুরুত্ব প্রদান করে, তখন শিক্ষার্থীদের অন্যতম লক্ষ্য হয় যেকোনো উপায়ে সার্টিফিকেট অর্জন করার। এ দৈন্যদশা আমাদের দেশে দৃশ্যমান দীর্ঘকাল ধরে। তাই নিজ নিজ জায়গা থেকে একটি সার্টিফিকেট পাওয়া অর্থাৎ কৃতকার্য হওয়া অসাধু শিক্ষার্থীরা যে কোনো অনৈতিক পন্থা অবলম্বনে সচেষ্ট থাকে। আমাদের দেশে পাবলিক পরীক্ষায় নকল করার প্রবণতা বরাবরই ছিলো। তা রোধ করতে বিভিন্ন সরকার কমবেশি আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছে বটে। কিন্তু ছাত্রদের সাথে যদি শিক্ষকরাও অধিক হারে অসাধু ও অনৈতিক পন্থার দোসর হন, তবে তা সুলক্ষণ নয়।

চলমান জেএসসি পরীক্ষায় গণিত বিষয়ে এবার নকলের প্রবণতা বাড়ছে বলে পত্রিকান্তরে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সেই প্রবণতায় পরীক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকরাও অনেক কেন্দ্রে নকলে যুক্ত হয়েছেন। অনৈতিক ও অসাধু মানসিকতার আরও ভয়াবহ রূপের প্রকাশ ঘটার কথাও জানা গেছে। চার শিক্ষক পরীক্ষার হল থেকে প্রশ্ন এবং শাদা খাতা বাড়িতে নিয়ে সেখানে বসেই উত্তরপত্র তৈরির সময় হাতেনাতে ধরা পড়েছেন। এছাড়াও ১৪ শিক্ষকের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের নকলে সহযোগিতাসহ এ ধরনের অসদুপায় অবলম্বনে সহায়তার অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। একই অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে ৪১ শিক্ষার্থীকে। বিগত কয়েক বছরে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় প্রায় গণহারে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ রয়েছে। চলমান জেএসসি পরীক্ষায় এখন পর্যন্ত প্রশ্নফাঁসের ঘটনা না ঘটলেও গুজব রয়েছে। আর সেই গুজবের নেপথ্যেও রয়েছেন এক শিক্ষক। এ সকল ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন করে দেখার সুযোগ নেই। শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। কিন্তু সেই মহান দায়িত্ববোধকে পাশ কাটিয়ে কিছু শিক্ষক যদি যেনতেন প্রকারে নীতি-নৈতিকতা-সততা বিসর্জন দিয়ে অধিক অর্থোপার্জনকেই ধ্যানজ্ঞান করেন, তবে তার নেতিবাচক প্রভাব সংক্রামক ব্যাধির মতো ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়বে।

তবে এ ধরনের অসাধু ঘটনার সাথে কিছু শিক্ষকের জড়িত থাকার ঘটনা যতো বেশিই ঘটুক, আমরা বিশ্বাস করতে চাই, শিক্ষক সমাজের সিংহভাগ প্রতিনিধি এখনও তাদের আদর্শের উচ্চাসনে আসীন রয়েছেন। যারা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন, তারা শিক্ষক না-হয়ে অন্য কোনো পেশায় ঢুকলেও সম্ভবত অন্য কোনো অসাধু কাজের ফন্দিফিকির খুঁজতেন। এ এক ধরনের মানসিক দৈন্য। সেই দৈন্যদশা থেকে শিক্ষক সমাজকে সতর্ক থাকতে হবে। আরও একটি উল্লেখ করার বিষয় হলো, এমপিও-ভুক্ত হতে হলে কিংবা ধরে রাখতে হলে একটি বিদ্যালয়কে পাসের হার একটি নির্দিষ্ট স্তরে রাখতে হয়। এটাও অনেক ক্ষেত্রে অনৈতিক কাজের জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী বলে বিভিন্ন অনুসন্ধানে জানা গেছে। তাছাড়া, শুধু জেএসসি নয়, সকল ধরনের পাবলিক পরীক্ষায় বিভিন্ন স্তরের কিছু দায়িত্বশীল ব্যক্তিও অসদুপায় অবলম্বনের মতো অবিমৃষ্যকারী ঘটনার নেপথ্যে কলকাঠি নেড়ে থাকেন। এ জাতীয় ঘটনার তদন্তে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বের হয়ে আসার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।