অশান্ত ইবি ক্যাম্পাস

 

একটি দেশের স্বাভাবিকতা ও সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো দেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুশিক্ষা অর্জনের পরিবেশ নিশ্চিত করা। বেশ কিছুদিন হলো আমরা পত্রপত্রিকাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ও অস্থিতিশীল অবস্থার চিত্র অবলোকন করছি, তাতে দেশের সব শ্রেণির মানুষই উদ্বিগ্ন।

 

সম্প্রতি পত্রিকার প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গেলো, তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল-শিবির ও পুলিশের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনা যখন ঘটে তখন তা শুধু বর্তমান প্রেক্ষাপটেই নয়, ভবিষ্যতের জন্যও আতঙ্কের বিষয়। কেননা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কলমের পরিবর্তে যখন অস্ত্রের ঝনঝনানি ক্রমাগত বাড়তে থাকবে- তখন তা পুরো জাতির জীবনেই দুর্ভোগ নেমে আসবে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ইদানীং এটা যেন একটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় কোনো কিছু হলেই অস্ত্রের মহড়া থেকে শুরু করে ভাঙচুরের ঘটনা অহরহ ঘটছে। যা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।

 

এবারের ঘটনাতেও দেখা যায়, গত শনিবার ছাত্রলীগের এক কর্মী গাড়িচালককে মারধর করার ঘটনা থেকে শুরু হয় হামলা পাল্টা হামলা, যা একসময় উভয় সংগঠনের নেতাকর্মীরা আগ্নেয়াস্ত্র, চাপাতি, রামদা, হকিস্টিক, লাঠিসোটা, ইটপাটকেল নিয়ে একে অপরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পুরো ক্যাম্পাসে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রলীগ-ছাত্রদল-শিবির তাণ্ডবে ক্যাম্পাস তার বৈশিষ্ট্য হারায়। কেননা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এ রূপ চিত্র হতে পারে না।

 

গত শনিবার সকালে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপি সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় ছাত্রদল-ছাত্রলীগ ও শিবিরের অন্তত ৫০ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। পরে আহতদের ইবি ও কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তিও করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে অর্ধশতাধিক রাউন্ড শর্টগানের গুলি ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করতে হয়েছে। আর এখন এ পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যলয়গুলোয় পুলিশকে যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিপেটা থেকে শুরু করে গুলি, টিয়ারসেল নিক্ষেপ করতে হয় তখন তা শুধু পরিতাপেরই নয়, লজ্জারও। যেখানে পুলিশের কোনো ভূমিকা থাকারই কথা নয়, সেখানে আজ ছাত্রদের সহিংস অবস্থান ও হিংসাত্মক মনোভাবের কারণে ক্যাম্পাসগুলো যেন হয়ে উঠছে এক ভয়ঙ্কর স্থান। নিঃসন্দেহে যা সুশিক্ষা অর্জনে প্রতিবন্ধক। এ ধরনের ঘটনার চিত্র শুধু ইবিতেই নয়- বিভিন্ন সময়ে ঢাবি, রাবি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে হচ্ছে। এতে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের যে ক্ষতি হচ্ছে তা অপূরণীয়। বিভিন্ন ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন হতে পারে। প্রতিবাদ হতে পারে যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে, কিন্তু তার ভাষা কখনো অস্ত্র আর পেশিশক্তি দিয়ে প্রকাশ হতে পারে না। আর যে ছাত্ররা ন্যায়ের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে এ জাতির বুক ভরিয়ে দিয়েছে সেই ছাত্ররাই আজ এসে যখন জাতিগত স্বার্থকে বাদ দিয়ে ব্যক্তিক বা গোষ্ঠীগত স্বার্থের কারণে একে অপরকে রক্তাক্ত করে তখন তার প্রভাব শুধু নেতিবাচকই নয় এটা পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকেই আতঙ্কিত করে তোলে।

 

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা আশা করবো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ নেবে এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনবে।