অরক্ষিত লেবেলক্রসিংগুলো হোক সকলের জন্য নিরাপদ

অরক্ষিত লেবেলক্রসিং মৃত্যুফাঁদে রূপান্তর হয়েছে মূলত অবৈধ স্থাপনা ও ঝোঁপ জঙ্গল আগাছার কারণে। এরকমই মৃত্যুফাঁদ চুয়াডাঙ্গা জীবননগরে আন্দুলবাড়িয়া বেলতলা লেবেলক্রসিঙ। সেখানে ফুটফুটে এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। গুঁড়িয়ে গেছে তাকে বহন করা প্রাইভেটকার। দিবালোকে অরক্ষিত লেবেলক্রসিং অতিক্রমের সময় প্রাইভেটকারের চালক ট্রেন দেখলেন না কেন? দেখলেন যখন-তখন বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। কারণ লেবেলক্রসিঙে উঠেই যখন দেখেন ছুটে আসছে ট্রেন তখন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি। সে কারণে ইঞ্জিনটিও থেমে গেছে। তিনি দ্রুত নামেন, অন্যদেরও নামতে বললেও বিষয়টি কেউ বুঝতেই পারেননি। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এরকমই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের দীর্ঘদিনের রুগ্নদশা যেন কিছুতেই কাটিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। লোকবল নিয়োগের বদলে লোকাসানের অজুহাতে একের পর এক স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় রেলওয়ের অরক্ষিত লেবেলক্রসিঙে দরজা স্থাপনসহ লোক নিয়োগের আশা সত্যিই অবান্তর। তাছাড়া সকল লেবেলক্রসিং সংরক্ষিত করাও সহজসাধ্য নয়। চুয়াডাঙ্গা-জীবননগর সড়কের দর্শনা রেলগেটটি দীর্ঘদিন ধরেই অরক্ষিত। মাঝে মাঝেই বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দেয়। এ আশঙ্কা তখনই বহুগুনে বেড়ে যায় যখন লেবেলক্রসিঙের দুধারে গাছপালা গজে ওঠার কারণে দূর থেকে রেললাইনটি দেখা যায় না। অনেকটা এরকমই লেবেলক্রসিং আন্দুলাড়িয়া-সরোজগঞ্জ সড়কের বেলতলা লেবেলক্রসিঙ। শুধু গাছপালা নয়, বহু স্থানেই অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলার কারণেও লেবেলক্রসিঙ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চুয়াডাঙ্গার আন্দুলবাড়িয়া বেলতলা লেবেলক্রসিঙটিতে শুধু যে গতপরশুই দুর্ঘটনা ঘটেছে তাও নয়। এর আগেও দুর্ঘটনায় রক্ত ঝরেছে। তারপরও লেবেলক্রসিঙটি নিরাপদ করার মতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে না পারার কারণেই উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদককে মেয়ে জামাইসহ দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়েছে। হারাতে হয়েছে নেতার নাতিছেলেকে। না, যেকোনো দুর্ঘটনাকেই নিছক নিয়তি বলে যেহেতু দায় এড়ানোর যুগ গত হয়েছে অনেক আগে, সেহেতু এখন আর ওই ধরনের হতাহত মেনে নেয়া যায় না।
আন্দুলবাড়িয়া-সরোজগঞ্জ সড়কটি একসময় মেঠোপথ ছিলো। কালক্রমে সড়কে উন্নীত হয়েছে। বেড়েছে সড়কের ব্যস্ততা। এ সড়কেই বেলতলা লেবেলক্রসিং। এখানে রেলওয়ের কোয়াড় নেই, নেই লোকবল। ফলে পথচারী বা যানবাহন চালকদের সতকর্তার সাথেই অরক্ষিত লেবেলক্রসিঙ পার হতে হয়। দূর থেকে রেললাইনে ট্রেনের অবস্থান অবলকনে দুর্ঘটনা হ্রাস সম্ভব। এজন্যই দরকার লেবেলক্রসিঙের আশপাশের গাছপালা পরিষ্কার করাসহ অবৈধ স্থাপনা থাকলে তা উচ্ছেদ। এ দায়িত্ব রেলওয়ের বলে এলাকাবাসীর দায় এড়ালে চলে না। অবশ্য সেজন্য দরকার সমাজের পথ প্রদর্শক ও আদর্শ মানুষগুলোর দূরদর্শী দায়িত্বশীলতা। কর্তব্যরত অধিকর্তাদেরও মধ্যেও প্রয়োজন সামাজিক দায়বদ্ধতা জাগিয়ে তোলা।