অবৈধ পন্থায় অন্য দেশে অভিবাসিত হওয়ার চেষ্টা এবং

 

বাংলাদেশ নিম্নমধ্য আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃত। অথচ এই দেশেরই হাজার হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছুটছেন বিভিন্ন দেশে। মানবপাচারকারীদের কবলে পড়ে প্রতারিত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। জাতিসংঘের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে হয়েছে, ২০১৪ সালের শুরু থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত দেড় বছর সময়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে সমুদ্রপথে বিদেশে পাচারকালে প্রায় ১১০০ অভিবাসনপ্রার্থী প্রাণ হারিয়েছেন।

অর্থনৈতিক অগ্রগতি দেশের মানুষ কেন অন্য দেশে অভিবাসী হওয়ার লক্ষ্যে বিপদসংকুল পথে নামছে, তা খতিয়ে দেখা দরকার। ভাগ্যের চাকা ঘোরানার আশায় অসংখ্য মানুষ কিছু অসাধু, লোভী, প্রতারকদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে বিপন্ন করছে জীবন। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, পাচারকারীরা মালয়েশিয়া নেয়ার কথা বলে অভিবাসনপ্রার্থীদের বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরে ফেলে চলে যায়। এদের কেউ বিভিন্ন রোগে, কেউ বা ক্ষুধার জ্বালায় আবার কেউ জাহাজের ক্রুদের নির্যাতনে মারা যান। শুধু এশিয়ায় নয়, অতি সম্প্রতি অবৈধ পথে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টাকালে লিবিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে বাংলাদেশিসহ কয়েকশ অভিবাসনপ্রার্থীর মৃত্যু ঘটেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ তো গেলো মানবিক বিপর্যয়ের একটি দিক, অন্যদিকে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে অনেক গণকবর আবিষ্কৃত হওয়ার পর এটাও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, অভিবাসনপ্রার্থীরা শুধু সমুদ্রেই মারা যাচ্ছেন না, তারা উদ্দিষ্ট দেশে পৌঁছেও মৃত্যুর শিকার হচ্ছেন। সাধারণত জাহাজ থেকে নামিয়ে অভিবাসনপ্রার্থীদের থাইল্যান্ডের গহিন বনে নিয়ে টেলিফোনে তাদের আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করা হয়। অর্থ আদায়ের পরই তাদের পাঠানো হয় মূল গন্তব্যে। নতুবা তাদের ভাগ্যে নেমে আসে মৃত্যু অথবা অন্য কোনো বিপর্যয়।

অবৈধ পন্থায় অন্য দেশে অভিবাসিত হওয়ার চেষ্টায় যে বিপদ রয়েছে কিংবা কাজটা যে অন্যায়, সে ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে পর্যাপ্ত প্রচারণা প্রয়োজন। দেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মানবপাচারকারী সংস্থাগুলোর ভিত্তি ভেঙে ফেলতে না পারলে এই দুষ্টব্যাধি থেকে মুক্তিলাভ প্রায় অসম্ভব। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বৈধ পথে বিদেশে শ্রম বিক্রির পথ আরো মসৃণ করা দরকার।