অবৈধভাবে দেশে অর্থ পাঠানোর প্রবণতা ঠেকাতে হবে

 

চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় সাড়ে ১৫ শতাংশ। আর এক মাস হিসেবে শুধু গত অক্টোবরে কমেছে প্রায় ৮ শতাংশ। ৩ নভেম্বর এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ডলারের বিপরীতে বিভিন্ন দেশে মুদ্রার মূল্যমান হ্রাস ও তেলের দাম কমার প্রভাব, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে শ্রমিকদের আয় কমে যাওয়া এবং অবৈধ চ্যানেল ব্যবহার করে দেশে অর্থ পাঠানোর প্রবণতা বাড়াসহ বিভিন্ন কারণে রেমিট্যান্স কমছে। প্রবাসী আয়ে ভাটার সংবাদটি আমাদের অর্থনীতির জন্য মোটেও সুখকর নয়। আমাদের জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম বড় জোগানদার প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ। কিন্তু যেসব কারণে প্রবাসীদের পাঠানো আয়ে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে সেসব কারণের সুরাহা করা আমাদের পক্ষে দুরূহ। তবে অবৈধ চ্যানেল ব্যবহার করে দেশে অর্থ পাঠানোর প্রবণতা ঠেকাতে হবে। অন্যদিকে সুখকর খবরও আছে। প্রবাসী আয় অনেক কমলেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার। এক সমীক্ষায় প্রকাশ, এ পরিমাণ অর্থ দিয়ে প্রায় নয় মাসের আমদানি দায় মেটানো সম্ভব। মূলত আমদানির তুলনায় রফতানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি, বেসরকারি খাতে প্রচুর বিদেশি ঋণ আসা এবং বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে রেমিট্যান্স কমার পরও রিজার্ভ বাড়ছে। জনশক্তি রফতানি বৃদ্ধির পরও রেমিট্যান্স কমার কারণ সম্পর্কে দায়িত্বশীল সূত্রের বরাত দিয়ে ওইসব প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক থাকেন এমন অধিকাংশ দেশের মুদ্রামান ডলারের বিপরীতে কমছে। এতে আগের চেয়ে বেশি অর্থ পাঠালেও ডলারে রূপান্তরের পর তা কমে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, জ্বালানি তেলের নিম্ন মূল্যের কারণে নির্মাণখাতে নেতিবাচক প্রভাবসহ এবং বিভিন্ন কারণে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থার নেতিবাচক প্রভাবও পড়েছে এক্ষেত্রে। বেকারত্ব বাড়ার পাশাপাশি মজুরি কমে যাওয়া অথবা জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে সঞ্চয় কমছে যা রেমিট্যান্স কমার অন্যতম কারণ।

বাংলাদেশে মোট রেমিট্যান্স আয়ের অর্ধেকেরও বেশি আসে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে। মুদ্রার মূল্যমান ও মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতির খারাপ অবস্থার পাশাপাশি হুন্ডি প্রবণতা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমার আরও কিছু কারণ। অবৈধপথে অর্থ প্রেরণের পথটি সঙ্কুচিত করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেয়া জরুরি। অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচক ইতিবাচক ধারায় থাকলেও প্রবাসী আয় মন্দা কাটানো যাচ্ছে না। বৈধপথে অর্থ প্রেরণের ব্যাপারে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়া দরকার সার্বিক প্রেক্ষাপট আমলে নিয়ে। প্রবাসী আয়ের গতি বাড়ানোর লক্ষ্যে দূরদর্শী কর্মপরিকল্পনাও দরকার। আমাদের অর্থনীতির অন্যতম শক্তি সঞ্চায়ক রেমিট্যান্সের ধারা গতিশীল থাকুক এটিই কাম্য।