অপরাধ করে পার পেলে সমাজে সে প্রবণতা বৃদ্ধি পায়

 

মোবাইলফোনে চাঁদাবাজচক্র কতোটা দুঃসাহসী না হলে একজন জেলা প্রশাসকের নিকট চাঁদা দাবি করে? চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের নিকট মোবাইলফোনে চরমপন্থি পরিচয়ে স্বজনদের ক্ষতি করার হুমকি দিয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করা হয়েছে। না, বিষয়টি মোটেও খাটো করে দেখার মতো নয়। যদিও চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাবাসীর কাছে মোবাইলফোনে ভীতিকর পরিচয়ে হুমকিধামকি দিয়ে চাঁদা দাবির বিষয়টি নতুন কিছু নয়। কোনো কোনো মহলে তো বিষয়টি অনেকটাই গাসওয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। জেলা প্রশাসকের নিকট চাঁদা দাবির পর নিশ্চয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহ তাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে কথিত চরমপন্থি পরিচয়ে গণহারে চাঁদাদাবি করা চাঁদাবাজক্রকে ধরে আইনে সোপর্দ করতে সক্ষম হবে। এ প্রত্যাশা অবশ্যই অবান্তর নয়।

নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও কৃষ্টিয়াসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা এক সময় সন্ত্রাসকবলিত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে উঠেছিলো। নানা নামে চরমপন্থি পরিচয়ে খুন, পাল্টা খুনে প্রায় প্রতিদিনই ভোর হতো খুনের খবরে। পুলিশকে লাশ উদ্ধারের কাজে ব্যস্ত থাকতে হতো। সেই ভীতিকর পরিস্থিতি এখন আর নেই। পুলিশ ও ৱ্যাবের অনমনীয় অভিযানে বাঘা বাঘা অস্ত্রধারীদের অধিকাংশেরই পতন হয়েছে। কেউ কেউ হাজতে। কিছু সংখ্যক সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকায় ঘুরলেও তাদের বিষয়ে পুলিশের সার্বক্ষণিক নজর রয়েছে। গোয়েন্দাসূত্র এরকমই তথা দিয়েছে। তাহলে দীর্ঘদিন ধরে মোবাইলফোনে চাদাঁবাজি করছে কারা? কিছু আছে স্থানীয় ভাবে গড়ে ওঠা ছিঁচকে গ্যাং, আর কিছু আছে দূরে থাকা প্রতারক। ছিঁচকে গ্যাঙ মোবাইলফোনে চাঁদাদাবি করেই ক্ষান্ত হয় না, এরা মোবাইল রেখে ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েও আতঙ্ক ছড়ায়। আর দূরে থাকা ওরা? এদের কিছু এজেন্ট আছে। তারা মোবাইলফোন নম্বরসহ ফোন ব্যবহারকারীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় সরবরাহ করে। দূরে থাকা ওই প্রতারক ভীতিকর পরিচয় ব্যবহার করে খুব ঠাণ্ডা মাথায় হুমকি দেয়। পার্টি চালানোর নাম করে টাকা চয়। এদের মূল অস্ত্র ওই সেলফোন তথা মোবাইলফোন। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক সয়মা ইউনুসের নিকট চাঁদা দাবি করা চক্রটা কোন শ্রেণির?

অবশ্যই মোবাইলফোনে চাঁদাবাজ রুখতে মন্ত্রতন্ত্র লাগে না। একটু আন্তরিক হয়ে প্রযুক্তি ব্যবহারেই চাঁদাবাজ শনাক্ত করা সহজ। এরপর আবার যুক্ত হযেছে নিবন্ধন। তাহলে একজন চাঁদাঁবাজ মোবাইলফোনে চাঁদাবাজির সুযোগ পাচ্ছে কীভাবে? তবে কি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের কর্তব্যরতদের দায়িত্ব পালনে ঘাটতি আছে? অস্বীকার করা যায় না। যদিও অপ্রতুলতাসহ কিছু অজুহাত দায়িত্বপালনকারীদের উদাসীনতাসহ অনিয়ম-দুর্নীতি আড়াল করার পুঁজি বটে। চাঁদাবাজ সে যেই হোক, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পুলিশি তৎপরতা প্রয়োজন। প্রযুক্তির মাধ্যমে সেলফোনের অবস্থান শনাক্ত করা যেমন অসম্ভব নয়, তেমনই সিম-রিম নিবন্ধনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীকেও চেনা সম্ভব। তাহলে সেলফোনে চাঁদাবাজ পার পাচ্ছে কীভাবে?