অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে না পারায় অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত

ধর্ষণের ঘটনায় বাংলাদেশ কী বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে চায়? এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই জাগতে পারে। কারণ প্রতিনিয়ত ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে অত্যন্ত লজ্জাকর এ খবরগুলো। রামপুরায় স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। খিলগাঁওয়ে পুলিশের এক নারী সদস্যও গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। শুধু ঢাকায় নয়, সারাদেশেই যেন মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়ছে ন্যাক্কারজনক ঘটনাগুলো। শিশু থেকে মাঝবয়সী নারী, স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, কর্মজীবী নারী- কেউ বাদ যাচ্ছে না নরপশুদের হাত থেকে। ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। অথচ জঘন্য এ অপরাধ দমনে উপযুক্ত পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত পাঁচ মাসে সারাদেশে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে ৮৯৬টি, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিলো ৭০২টি, অর্থাৎ বেড়েছে ১৯৪টি। উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে এ সংখ্যা যে আরো দ্রুত বাড়বে সে ব্যাপারে কারো সন্দেহ থাকার কথা নয়। সমাজবিজ্ঞান ও অপরাধবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞরা ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধির পেছনে নানা কারণকে দায়ী করলেও সবচেয়ে বেশি দায়ী করছেন দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত বিচারের মাধ্যমে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে না পারাকে।

জানা যায়, গত ১০ বছরে দেশে ধর্ষণের মামলা হয়েছে পাঁচ হাজার ১১৭টি। এর মধ্যে আজ পর্যন্ত রায় হয়েছে মাত্র ৮৮১টির, আর সাজা হয়েছে মাত্র ১০১ জনের। প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ, তদন্তের গাফিলতি ও তদন্ত প্রতিবেদনের বিকৃতি, তথ্য-প্রমাণের অভাব, সাক্ষীর সাক্ষ্য দিতে অনীহাসহ নানাবিধ কারণে অধিকাংশ অপরাধী বিচারে খালাস পেয়ে যায়। অথচ প্রকৃত হিসাব পেলে দেখা যাবে, অপমান সইতে না পেরে ধর্ষণের শিকার নারীরা আত্মহত্যা করেছে তার চেয়েও বেশি। ধর্ষণ এমন এক সমস্যা, যা শুধু নারীদের নয়, দেশের সামগ্রিক অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে। অথচ এ সমস্যা মোকাবেলায় রাষ্ট্রের সীমাহীন উদাসীনতা আমাদের প্রতিনিয়ত পীড়িত করছে। ধর্ষণ মামলার বহু আসামি ধরা পড়ে না। আবার যারা ধরা পড়ে তাদেরও অধিকাংশ জামিনে বেরিয়ে যায় এবং মামলার বাদীকে চাপ দিয়ে কিংবা ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলা তুলে নিতে বাধ্য করে। সাক্ষী সুরক্ষা আইন না থাকায় অধিকাংশ সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে ভয় পায়। প্রভাবশালীদের চাপে এবং ঘুষ নেয়ার কারণে তদন্ত প্রতিবেদন বিকৃত করা হয় বলেও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। আবার ধর্ষণের শিকার নারীদের পরিবার আর্থিক ও সামাজিক দিক থেকে দুর্বল হওয়ায় শেষ পর্যন্ত মামলা চালিয়ে যেতে পারে না। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্রুততম সময়ে এসব মামলার বিচারকাজ সম্পন্ন করতে হবে, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে এবং মামলা পরিচালনায় রাষ্ট্রের সব রকম সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।